উঁচু ও মাঝারি দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য বেশি উপযোগী ৷ লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয় ৷ সাধারণত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি গম চাষের জন্য উপযুক্ত ৷ তবে মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ হয় ৷ দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি গম চাষের জন্য সর্বোত্তম ৷ সহজে পানি নিষ্কাশিত হয় এমন ভারী অর্থাৎ এঁটেল ও এঁটেল-দোঁআশ মাটিতেও গমের চাষ করা যায় ৷
ভাতের পরই বাংলাদেশে যে খাদ্যটির চাহিদা বেশি সেটি হলো আটা ও ময়দা। আর আটা-ময়দা আসে গম থেকে। দেশের মানুষের বিশেষ করে শহরাঞ্চলে সকালের নাস্তার একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকে গমের আটা বা ময়দার রুটি-পরোটা। যদিও বাংলাদেশে গমের চাষ যতটা প্রসার লাভ করার কথা ছিল ততটা হয়নি, তবুও যে পরিমাণ জমিতে গমের চাষ হয় সেই জমিতে আধুনিক পদ্ধতি মেনে চাষ করলে গমের ফলন বেশি পাওয়া যেতে পারে।
সরিষাতে বিভিন্ন জাতের পোকার আক্রমণ হতে পারে৷ এসব পোকার মধ্যে প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকা এবং প্রতিকার বা দমনের পদ্ধতি আলোচনা করা হলো৷
মসুরের বিভিন্ন রকম রোগ মসুরের স্বাভাবিক ফলনকে ব্যাহত করে থাকে। এর ফলে কাংখিত ফলন পাওয়া যায় না।
সাধারণত ভালো ফলন ও উন্নত মানের আঁশের জন্য ক্ষেতের শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগ গাছে ফুলের কুঁড়ি দেখা দিলে (সাধারণত ১১০-১২০ দিনে প্রায় ৫০% গাছে ফুল আসে) পাট কাটা উচিত। উল্লেখিত সময়ের পূর্বে পাট কাটলে আঁশের মান ভালো থাকে, কিন্তু ফলন কম হয়। আবার দেরিতে কাটলে ফলন বেশি হয় কিন্তু আঁশের মান খুব খারাপ হয়।
পাটের বিভিন্ন রোগ পাটের স্বাভাবিক ফলনকে ব্যাহত করে থাকে।
উঁচু ও মধ্যম উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি বেশি সময় দাঁড়ায় না এবং দো-আঁশ মাটি পাট চাষের জন্য বেশি উপযোগী। বৃষ্টিপাতের পরপরই আড়াআড়ি ৫-৭ টি চাষ দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। ঢেলা গুড়ো করতে হবে এবং জমি আগাছামুক্ত করতে হবে।
পাট একটি প্রাকৃতিক আঁশ যা মূলত বাংলাদেশ ও ভারতে জন্মে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাটের উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ এবং পাট দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য। পাট একটি বহুমুখী ফাইবার যা বস্তা, ব্যাগ, কার্পেট এবং অন্যান্য টেক্সটাইল উত্পাদন সহ বিস্তৃত অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়। নির্মাণ শিল্পে নিরোধক এবং কংক্রিটের শক্তিবৃদ্ধি উপাদান হিসেবেও পাট ব্যবহার করা হয়।বাংলাদেশে বহু বছর ধরে পাট দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাট শিল্প বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান করে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি প্রধান উৎস। পাট বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। যাইহোক, বাংলাদেশের পাট শিল্প সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃত্রিম তন্তুর প্রতিযোগিতা এবং ঐতিহ্যবাহী পাটজাত পণ্যের চাহিদা হ্রাসের কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর অব্যাহত প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চিত করার জন্য শিল্পের আধুনিকীকরণ এবং পাটের জন্য নতুন অ্যাপ্লিকেশন বিকাশের প্রচেষ্টা চলছে।
ভূট্টা বাংলাদেশের অন্যতম খাদ্যশস্য। ভূট্টার নানা রকম রোগ ভূট্টার স্বাভাবিক ফলন ব্যহত করে। এসব রোগ সম্পর্কে ভালভাবে জেনে প্রতিকার করা সম্ভব।
ভুট্টা (বৈজ্ঞানিক নাম Zea mays) একপ্রকারের খাদ্য শস্য। এই শস্যটির আদি উৎপত্তিস্থল মেসো আমেরিকা। ইউরোপীয়রা আমেরিকা মহাদেশে পদার্পণ করার পর এটি পৃথিবীর অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনোএসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন "এ" থাকে।
বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।
মসুর ডাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য। এর ইংরেজি নাম Red lentil। এ ডালকে পানিতে সেদ্ধ করে তেল-মশলা সহযোগে রান্না করা হয় এবং রান্না করা ডাল মিশিয়ে ভাত খাওয়া হয়। মানব দেহে আমিষের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বলা হয়ে থাকে মসুর ডাল গরিবের জন্য মাংস। মসুর ডাল দেখতে হালকা লাল বর্ণের। দানাগুলো খেসাড়ী, কলাই বা বুটের ডাল থেকে ছোট। মসুর ডাল উচ্চ আমিষসমৃদ্ধ ; ফলে মানব দেহে আমিষের অভাব পূরণ করার জন্য যথেষ্ট।