ধানের
কান্ড পচা রোগ (Rice stem rot disease) চেনার
উপায় ও তার প্রতিকার করনীয়
রোগের
কারণঃ
এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ।
কান্ড
পচা রোগের লক্ষণঃ
এই রোগ সাধারণত কুশি ও বাড়ন্ত অবস্থায় ধান ক্ষেতে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। রোগ জীবাণু মাটিতে থাকার কারণে আক্রান্ত জমিতে সেচ দিলে সেচের পানি দিয়ে রোগ জীবাণু সহজেই কাণ্ডে আক্রমণ করতে পারে। প্রথমে কুশির বাইরের দিকের খোলে আক্রমণ করে। ফলে ধান গাছের বাইরের খোলে কিছুটা আয়তাকার গাঢ় কালচে দাগ পড়ে। এছাড়াও শীষকে আবৃতকারী পাতার খোলে গোলাকার দাগ পড়ে এবং দাগের কেন্দ্র কিছুটা ধূসর ও কিনারা বাদামি রঙের হয়ে যায়। পরবর্তীতে দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে খোলে এবং কাণ্ডের ভিতরে প্রবেশ করে। ফলশ্রুতিতে আক্রান্ত কাণ্ড পচে গিয়ে ধান গাছ হেলে ভেঙ্গে পড়ে এবং ধান চিটা ও অপুষ্ট হয়ে থাকে।
কান্ড
পচা রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
১) ফসল কাটার পর জমি শুকিয়ে নাড়া ও খড় জমিতেই পুড়ে ফেলা।
২) রোগ প্রতিরোধ/ সহনশীল ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করতে হবে। যেমন- বিআর ১০, বিআর ১১,বিআর ১৪, বিআর ২২, বিআর ২৩, বিআর-২৯, ব্রিধান-৩০, ব্রিধান-৩১, ব্রি ধান ৩২ ব্রিধান-৪০, ব্রিধান-৪২, ব্রিধান-৪৪,ব্রিধান-৪৫, ব্রিধান-৪৬, ব্রিধান-৪৭ ইত্যাদির চাষ করা যায়।
৩) জমিতে ঘন করে চারা না লাগিয়ে লাইন ও লোগো পদ্ধতিতে চারা রোপণ করতে হবে।
৪) জমিতে সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
৫) ধান ক্ষেতে এই রোগ পরিলক্ষিত হওয়া মাত্র জমিতে পানি শুকিয়ে আবার পানি দিতে হবে।
৬) আক্রান্ত জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে পটাশ সার বেশি দিতে হবে।
৭) আক্রান্ত জমি থেকে পরবর্তী বছরের জন্য বীজ সংগ্রহ করা যাবে না।
কান্ড
পচা রোগ ভেষজ পদ্ধতিতে দমনঃ
পেঁপে পাতা দ্বারা দমনঃ
এক কেজি পরিমাণ পেঁপে পাতা পিষে ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার একসাথে মিশ্রণ করে মিশ্রণটি ছেঁকে ৫ শতক জায়গায় প্রয়োগ করা।
জবা ফুলের পাতা দ্বারা দমনঃ
এক কেজি পরিমাণ জবা ফুলের পাতা পিষে ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার সহ একত্রে মিশ্রণ করে মিশ্রণটি ছেঁকে ৫ শতক জায়গায় প্রয়োগ করা।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন(Suppression of chemical methods)
১।বালাইনাশকের নামঃ ব্যাভিস্টিন ডিএফ
গ্রুপঃ কার্বেন্ডাজিম
প্রয়োগ মাত্রাঃ ৬৭ গ্রাম/বিঘা
কোম্পানীঃ বিএএসএফ বাংলাদেশ লিমিটেড
২।বালাইনাশকের নামঃ নোইন ৫০ ডব্লিউপি
গ্রুপঃ কার্বেন্ডাজিম
প্রয়োগ মাত্রাঃ ১৩৩ গ্রাম/বিঘা
কোম্পানীঃ ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশ(প্রাইভেট)
৩।বালাইনাশকের নামঃ ফরাস্টিন ৫০ ডব্লিউপি
গ্রুপঃ কার্বেন্ডাজিম
প্রয়োগ মাত্রাঃ ১৩৩ গ্রাম/বিঘা
কোম্পানীঃ সেতু পেস্টিসাইডস লিমিটেড
৪।বালাইনাশকের নামঃ ভালকান ৫০ ডব্লিউপি
গ্রুপঃ কার্বেন্ডাজিম
প্রয়োগ মাত্রাঃ ১৩৩ গ্রাম/বিঘা
কোম্পানীঃ এথারটন ইমব্রুস কোম্পানী লিমিটেড
৫।বালাইনাশকের নামঃ নোবিন ৫০ ডব্লিউপি
গ্রুপঃ কার্বেন্ডাজিম
প্রয়োগ মাত্রাঃ ১৩৩ গ্রাম/বিঘা
কোম্পানীঃ আইসিআই এগ্রিকেয়ার
৬।বালাইনাশকের নামঃ সানভিট ৫০ ডব্লিউপি
গ্রুপঃ কপার অক্সিক্লোরাইড
প্রয়োগ মাত্রাঃ ৪৫৫ গ্রাম/বিঘা
কোম্পানীঃ ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশ(প্রাইভেট) লিমিটেড।
৭।বালাইনাশকের নামঃ বাইকপার ৫০ ডব্লিউপি
গ্রুপঃ কপার অক্সিক্লোরাইড
প্রয়োগ মাত্রাঃ ৩৭৫ গ্রাম/বিঘা
কোম্পানীঃ বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ
৮।বালাইনাশকের নামঃ ডিলাইট ৫০ ডব্লিউপি
গ্রুপঃ কপার অক্সিক্লোরাইড
প্রয়োগ মাত্রাঃ ৩৭৫ গ্রাম/বিঘা
কোম্পানীঃ এসিআই ফর্মুলেশনস লিমিটেড
এছাড়াও জমিতে রোগের আক্রমণ বেশি হলে প্রোপিকোনাজল ( টিল্ট/ প্রউড ১ মিলি/ লিটার) বা হেক্সাকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ( কনটাফ/ কনজা ১ মিলি/ লিটার) অথবা টেবুকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ( ফলিকুর ১ মিলি/ লিটার ) অথবা থায়োপেনেট মিথাইল জাতীয় ছত্রাকনাশক (টপসিন এম ৭০ ডব্লিউপি) ২ গ্রাম/১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।