৬. লেয়ার বাচ্চা সাধারণত কত সপ্তাহ পালতে হয়?
• আট সপ্তাহ বা দুই মাস তবে আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে এ বয়স বাড়তে বা কমতে পারে।
৭. বাচ্চার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য কি কি করতে হবে?
• অধিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন বাচ্চা এবং ফলপ্রসূ পালন ব্যবস্থা রক্ষা করতে হবে।
৮. মুরগীর বাচ্চা যে ঘরে পালন করা হয় তাকে কি ঘর বলে?
• ব্রুডিং ঘর বা বাচ্চা পালনের ঘর বলা হয়।
৯. বাচ্চা কি কি পদ্ধতিতে পালন করা হয়?
• প্রাকৃতিক পদ্ধতি অর্থাৎ মুরগীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়, কৃত্রিম পদ্ধতি কুঁচে মুরগীর মত একই ব্যবস্থাপনার সকল শর্ত রক্ষা করে মানুষের দ্বারা বাচ্চা পালিত হয়।
১০. প্রাকৃতিক পদ্ধতি কোথায় কোথায় পালিত হয়?
• গ্রামীণ ডিম উৎপাদনে ১০০% বাচ্চা কুঁচে-মুরগীর মাধ্যমে পালন করা হয়।
১১. প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে কত দিন বাচ্চা পালতে হয়?
• পালক দ্বারা বাচ্চার গা না-ঢাকা পর্যন্ত বাচ্চা মুরগীর মত যত্ন করে পালতে হয় কারণ এসময় বাচ্চা শরীরের তাপ নিজেরা রক্ষা করতে পারে না।
১৫. প্রাকৃতিক উপায়ে একটি দেশীয় মুরগী কয়টি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে পারে?
• প্রায় ১৫টি দেশীয় ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে পারে তবে ১২টির বেশি বিদেশী ডিম না বসানোই উত্তম।
১২. দেশীয় মুরগী কতগুলো বাচ্চা পালতে পারে?
• দেশীয় মুরগী প্রায় ১৫-১৬টি বাচ্চা পালতে পারে। বিদেশী মুরগী কখনো বাচ্চা পালন করে না কারণ এটি এ জাতের একটি বৈশিষ্ট্য।
১৩. কৃত্রিম পদ্ধতিতে কত দিন বাচ্চা পালন করতে হয়?
• চার থেকে ছয় সপ্তাহ তবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে যে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এক্ষেত্রেও তা একইভাবে প্রযোজ্য।
১৪. কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা পালনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত?
• সঠিক তাপমাত্রা, পরিমিত খাদ্য, পানি, উপযুক্ত আলো-বাতাস চলাচল, বিছানা ও সার্বিক জীবনিরাপত্তা ইত্যাদি।
১৫. কিভাবে ঘরের জীবাণু নাশ করা যাবে?
• প্রতি ১০০ বর্গমিটার জায়গার জন্য ৩০% ফরমালিন ১.৬ লি., ০.৮ কেজি পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ০.৮ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটাতে হবে।
১৬. পাঁচশত বাচ্চার জন্য কি মাপের চিক গার্ড লাগে?
• হার্ডবোর্ড অথবা টিনের তৈরি ৪৫-৪৬ সে.মি. উচ্চতার ও ৩.২৫ মিটার ব্যাসের চিকগার্ড লাগবে।
১৭. লেয়ার মুরগীর বিছানা কেমন হওয়া উচিত?
• চিকগার্ডের ভিতরে হোভারের (তাপাধার গোলাকার ছাউনী) নিচে ৮-১০ সে.মি. পুরু লিবার (বিছানা) তুষ, খড়, করাতের গুঁড়া, বালু ইত্যাদি জিনিস বিছাতে হবে।
১৮. লেয়ার মুরগীর জন্য কি মাপের ব্রুডার দিতে হবে?
• প্রায় ৪ ফুট ব্যাসের ব্রুডারে ৫০০ বাচ্চার জন্য একটি ব্রুডার দিতে হবে।
১৯. বাজারে কি কি নামের ব্রুডার পাওয়া যায়?
• তুকেনী ইলেকট্রিক ব্রুডার, হিটার বা গ্যাস ব্রুডার, রাইনন্দ ক্যানোপি হিটার বা গ্যাস ব্রুডার, ইনফ্রারেড ইলেকট্রিক ব্রুডার, হারিকেন ও স্টোভ ইত্যাদি।
২০। এসব ব্রুডার ছাড়া সহজে ব্যবহার করা যায় কোনটি? ৩৫. বেশি আর্দ্রতায় কি সমস্যা হবে?
• বিছানা ভেজা থাকবে, খাবার স্যাঁতস্যাতে হবে, খাবার গ্রহণ কমে যাবে ও আশানুরূপ মুরগীর ওজন বাড়বে না।
.২১. প্রথম প্রথম কিভাবে পানি সরবরাহ করতে হবে?
• প্রথম ১২ ঘন্টা প্রতি লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম চিনি মিশিয়ে ১৬-২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় খাওয়াতে হবে।
২২. প্রথম প্রথম কিভাবে খাবার দিতে হবে?
• মোটা কাগজ, চট বা বিশেষভাবে তৈরি পাত্রে ভাঙ্গা গম বা ভূট্টা ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন কাপ বদলাতে বা পরিষ্কার করতে হবে।
২৩. এ সময় খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কি সতর্কতা পালন করতে হবে?
• খাবার যাতে বিছানায় না মিশে বা বিছানায় না পড়ে এবং বাচ্চা ঠিকমত খাচ্ছে কিনা তা সামান্য দূর থেকে খেয়াল রাথতে হবে।
২৪। তিন-চার দিন পরে কিভাবে খাদ্য ও পানি দিতে হবে?
• কাঠ, টিন, প্লাষ্টিক, বাঁশ বা মাটির তৈরি পাত্রে খাবার দেয়া যাবে। লম্বা অথবা গোলাকার টিনের, প্লাষ্টিক অথবা মাটির তৈরি পাত্রে পানি দিতে হবে।
২৫. কয়টি খাবার পাত্র ও পানির পাত্র দিতে হবে?
• প্রতি ২৫টি বাচ্চার জন্য একটি খাবার পাত্র এবং ৭৫×৬০×৫ সে.মি. মাপের একটি পানির পাত্র দিতে হবে।
২৬. বয়স বৃদ্ধির পর্যায়ক্রমে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রতি বাচ্চার জন্য কতটুকু খাবার লাগবে?
• ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সপ্তাহে প্রতিদিন যথাক্রমে ১০, ২০, ৩০ ও ৪০ গ্রাম খাবার লাগবে।
২৭. দশ থেকে এগার সপ্তাহ বয়সী একটি লেয়ার বাচ্চার জন্য প্রতিদিন কতটুকু খাবার লাগবে?
• প্রতিদিন ১০০ গ্রাম হিসাবে খাবার লাগবে।
২৮. খাদ্য, পানি ও আলো সরবরাহ কি রকম হবে?
• লিটার পদ্ধতির অনুরূপ হতে পারে।
২৯. বাড়ন্ত লেয়ার মুরগী বলতে কোন মুরগীকে বুঝায়?
• দুই-চার মাস বয়সের লেয়ার মুরগীকে বাড়ন্ত লেয়ার মুরগী বলে।
৩০. লেয়ার পুলেট কাকে বলে?
• লেয়ার পুলেট হচ্ছে ১৪ সপ্তাহ থেকে প্রথম ডিম দেয়ার পূর্ব-বয়সী মুরগীর বাচ্চা।
৩১. সব পুলেট পালা লাভজনক হবে কি?
• না, গড় ওজনের নিচের ওজনের পুলেট থেকে ভালো ডিম উৎপাদন আশা করা যাবে না।
৩২. বাড়ন্ত বয়সে সঠিক মাত্রায় মুরগীর খাদ্য-পুষ্টি না পেলে কি হবে?
• ডিম পাড়ার বয়সে ডিম উৎপাদন আশানুরূপ হবে না।
৩৩. বাড়ন্ত লেয়ার বাচ্চা কতটুকু খাবার খায়?
• প্রায় ৬০-৯০ গ্রাম সুষম খাদ্য খায়।
৩৪. কোন বয়সে বাড়ন্ত মুরগীকে ডিমপাড়ার ঘরে স্থানান্তর করতে হবে?
• বাড়ন্ত মুরগীকে ১৭-১৮ সপ্তাহের বয়সে ডিমপাড়ার ঘরে স্থানান্তর করা উচিৎ।
৩৫. খোলা আলো-বাতাসের জন্য বহুতলাবিশিষ্ট তাকে কিভাবে মুরগী পালা যায়?
• হার্ডবোর্ড দ্বারা লিটার ধরে রাখার জন্য এক তাক থেকে অপর তাক ২ ফুট উঁচুতে তৈরি করে লিটারে মুরগী পালা যেতে পারে।
৩৬. কোন বয়সে ডিমপাড়া মুরগী খাঁচাতে উঠাতে হয়?
• ডিমপাড়া মুরগী ১৬-১৮ সপ্তাহ বয়সে খাঁচাতে উঠাতে হয়। বর্তমানে খাঁচা পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়।
৩৭ খাঁচা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ কি কি?
• খাঁচা পদ্ধতির সুবিধা হচেছ এতে পরিচর্যা সহজ, সুস্থতা-অসুস্থতা, অনুৎপাদনশীলতা সহজে বুঝা যায়, ডিম সংগ্রহ সহজ, ডিম পরিষ্কার থাকে, খাদ্য কম লাগে, কম জায়গায় বেশি মুরগী পালা যায়, মজুরী খরচ কম। খাঁচা পদ্ধতির অসুবিধা হচেছ এতে পায়খানা পরিষ্কার করার সমস্যা, মাছির উপদ্রব বাড়ে, দূর্গন্ধ হয়, মাঝে মাঝে চুন ছিটাতে হয়, তারের ঘষায় পায়ে অসুবিধা হয়, পায়ে কড়া পড়ে এবং খাঁচা খরচ বেশি।
৩৮. প্রতি মুরগীর জন্য খাঁচাতে কতটুকু জায়গা লাগে?
• লাল জাতের মুরগীর জন্য খাঁচাতে ৩০×১৮×১৬ সে.মি. অর্থাৎ ৪৬৪ ব. সে.মি. বা ৭২ ব. ই.এবং সাদা মুরগীর জন্য ১২×১৬×১৪ সে.মি. বা ৬৪ ব.ই. বা ৪১৫ ব. সে.মি.জায়গার দরকার।
৩৯. খাঁচা কত তলাবিশিষ্ট হতে পারে?
• খাঁচা তিন তলাবিশিষ্ট হতে পারে। প্রতি তলার নিচে টিন বা প্লাষ্টিকের ট্রে রেখে বিষ্টা জমানো হয় এবং ২-৩ দিন পরপর বিষ্টা সরানো হয়।
৪০. বিষ্টা না সরালে কি হবে?
• মাছি বংশ বিস্তার করে এবং দূর্গন্ধ বেড়ে যায় ও তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ জন্মাতে পারে।
৪১. খাবার পাত্র ও পানির পাত্র কোন অবস্থায় লাগানো থাকে?
• পরিচর্যাকারীর চলার সুবিধার্থে খাঁচার সামনের দিকে অথবা পিছনের দিকে ঝুলানো অবস্থায় বসানো থাকে।
৪২. খাঁচা-লিটার পদ্ধতিটি কি?
• এ পদ্ধতিতে ঘরের একটা অংশে খাঁচা তৈরি (১৮ ইঞ্চি উঁচুতে) থাকে, অন্য অংশে লিটার বিছানো থাকে। মুরগী ইচ্ছামত লিটারে চলাফেরা করতে পারে আর রাতে ঘুমাতে পারে। প্রতি মুরগীর জন্য জায়গা লাগে প্রায় ১.৬ বর্গফুট।
৪৩. এ পদ্ধতিতে বিশেষ কি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার?
• মুরগী যাতে খাঁচার নিচে না ঢুকতে পারে তার জন্য খাঁচা ও মেঝের মাঝখানে ফাঁকা স্থানে ডিম পাড়ার বাক্স দেয়া হয় আর বাকী অংশ বন্ধ করে রাখা হয়। ১২১. ডিবিকিং-এর পরবর্তীতে কি কি করতে হবে?
• পরবর্তী ২-৩ দিনে ভিটামিন ‘কে’ খাওয়াতে হবে, খালি ভিটামিন-মিশ্রিত খাবার পানি খাওয়াতে হবে এবং আরামদায়ক বাসস্থানে রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পানি ও খাবার খাওয়াতে হবে ও মুরগী স্থানান্তর করা যাবে না।
৪৪. মুরগীর ধকল বলতে কি বুঝায়?
• যে কারণে মোরগ-মুরগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, দৈহিক বৃদ্ধি, আরাম ও উৎপাদন ক্ষমতা অস্বাভাবিক বা কোনভাবে বিঘ্নিত হয় তাকে ধকল বা স্ট্রোক বলে।
৪৫. মুরগীর ধকলের বিযয়সমূহ কি হতে পারে?
• যে কারণে ধকল হয়: বিভিন্ন সময়ে অবস্থান পরিবর্তন, অতি গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া, অপরিমিত ব্রুডিং তাপমাত্রা, সরাসরি গরম বা ঠান্ডা বাতাস, বাসস্থানের অপরিমিত জায়গা, টিকা প্রদান পরবর্তী সময়ে অস্বাভাবিক শব্দ, অচেনা লোক, অপুষ্টি, বিঘ্নিত পানি সরবরাহ/পানি স্বল্পতা, ডিবিকিং, কৃমির উপদ্রব, অস্বাভাবিক দৈহিকবৃদ্ধি, উচ্চহারে ডিম প্রদান, রোগাক্রান্ত অবস্থার অবসান এবং আরও অনেক অজানা অচেনা কারণ থাকতে পারে।
৪৫. ধকলের ফলাফল কি কি হতে পারে?
• খাদ্য গ্রহণে অনীহা, দেহ অবসাদগ্রস্থ, দৈহিক ওজন ও উৎপাদন হ্রাস এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে।
৪৬. ধকল প্রতিকার বা প্রশমনে কি কি করণীয় থাকতে পারে?
• ধকলের প্রকৃত বা সম্ভাব্য কারণ সনাক্ত করে প্রতি ধকলের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন কোন ধকল থেকে মুরগী নিজেই কাটিয়ে উঠতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা/ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, অতি গরমে বাসস্থানের ভিতরের তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা করতে হয়, সকাল এবং বিকালে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়, অতি গরমে পানিতে বরফ বা ইলেকট্রোলাইট এবং পানিতে ভিটামিন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
৪৭. তাপজনিত ধকলের উৎস কি কি হতে পারে?
• সূর্যের রশ্মি আর ঘরের ভিতরে মুরগীর শরীরের তাপমাত্রা তাপজনিত ধকলের উৎস হতে পারে।
৪৮. ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মুরগীর কি হয়?
• মুরগীর শরীরে ঘর্মগ্রন্থি নেই বিধায় নিজের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুরগী হাঁপায়।
৪৯. ধকলের অধিক গরমে কি কি ক্ষতি হয়?
• পানি বেশি খায়, খাবার কম খায়, ডিম উৎপাদন কমে, ব্রয়লারের ওজন বাড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে মুরগী মারাও যায়।
৫০. মুরগীর ঘরের আরামদায়ক ও ক্ষতিকর তাপমাত্রা কতটুকু?
• ১৫-২৬ ডিগ্রি সে. আরামদায়ক, ২৭-৩০ ডিগ্রি সে. শেষ পর্যায়ে সহনীয়, ৩১-৩৫ ডিগ্রি সে. অসহনীয়, এক্ষেত্রে মুরগী খাবার কম খায়, পানি গ্রহণ বাড়ে, ডিমের আকার ছোট হয়, খোসা পাতলা হয়, সামান্য হাঁপাতে থাকে, পাতলা পায়খানা হয়। ৩৬-৪০ ডিগ্রি সে. ডানা ঝুলে পড়ে, হাঁপাতে থাকে, দেহে অবসন্নতা আসে, দৈহিক ওজন ও ডিম উৎপাদন উভয়ই কমে, ৪১ ডিগ্রি সে.-এর উপরে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।