পাট ও পাটের জাত
পাঠের পরিচিতি
পাট একটি প্রাকৃতিক আঁশ যা মূলত বাংলাদেশ ও ভারতে জন্মে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাটের উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ এবং পাট দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য।
পাট একটি বহুমুখী ফাইবার যা বস্তা, ব্যাগ, কার্পেট এবং অন্যান্য টেক্সটাইল উত্পাদন সহ বিস্তৃত অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়। নির্মাণ শিল্পে নিরোধক এবং কংক্রিটের শক্তিবৃদ্ধি উপাদান হিসেবেও পাট ব্যবহার করা হয়।বাংলাদেশে বহু বছর ধরে পাট দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাট শিল্প বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান করে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি প্রধান উৎস। পাট বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে।
যাইহোক, বাংলাদেশের পাট শিল্প সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃত্রিম তন্তুর প্রতিযোগিতা এবং ঐতিহ্যবাহী পাটজাত পণ্যের চাহিদা হ্রাসের কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর অব্যাহত প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চিত করার জন্য শিল্পের আধুনিকীকরণ এবং পাটের জন্য নতুন অ্যাপ্লিকেশন বিকাশের প্রচেষ্টা চলছে।
পাঠের কৃষিতাত্ত্বিক উপযোগীতা
ধান ও গম বাংলাদেশের প্রধান দুটি খাদ্য শস্য। কিন্তু বছরের পর বছর একই জমিতে ধান এবং গমের আবাদ করা হলে পরিবেশগত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি হয়। ধান ও গমের শিকড় ৩-৪ ইঞ্চির বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। তাছাড়া শিকড়ের নিচে একটি শক্ত আস্তরণ সৃষ্টি হয়; এর নিচে গাছের খাদ্য উপাদান জমা হয়। কিন্তু ধান ও গমের শিকড় সেখানে পৌঁছাতে পারে না। তবে এর উপরের স্তরের খাদ্য উপাদান নিশেষিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় ফসল- চক্রে পাট চাষ করা হলে পাটের ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা শিকড় মাটির তলার শক্ত আস্তরণ ভেঙ্গে ফেলে এবং নিচের স্তর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। আরো জানা যায় যে, পাটগাছ যে খাবার খায় তার ৬০% মাঠে দাঁড়ানো অবস্থায় পাতা ঝড়ানোর মাধ্যমে মাটিতে ফিরিয়ে দেয়। তাই ধান, গম এবং অন্যান্য ফসলের আবাদ টিকিয়ে রাখতে হলে শস্য পর্যায়ে পাট চাষ অবশ্যই করতে হয়।
পাঠের জাত
বাংলাদেশে পাটের বেশ কিছু জাত বা জাত রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাধারণ কিছু পাটের একটি তালিকা রয়েছে:
১।তোষা পাট: এটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাষ করা পাটের জাত, পাট উৎপাদনের প্রায় ৮০%। এটি উচ্চ ফলন এবং ফাইবার মানের জন্য পছন্দ করা হয়।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) তার প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে তোষা পাটের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করেছে। এখানে BJRI দ্বারা উদ্ভাবিত সাধারণভাবে পরিচিত তোষা পাটের কিছু জাতগুলির নাম দেওয়া হল:
ফসল/জাত | বপন সময় | ফলন (টন/হেঃ) | জীবনকাল (দিন) | বৈশিষ্ট্য |
১) ও-৪ | ১ বৈশাখ- ৩০ বৈশাখ | ২.৩২ | ১২০-১৩৫ | গাছ সম্পূর্ণ সবুজ, পাতা সরু, হাল্কা সবুজ। উঁচু জমিতে বপনযোগ্য, বীজের রঙ নীলাভ সবুজ, উচচ ফলনশীল জাত। |
২) ও-৯৮৯৭ | ১ চৈত্র - ১৫ বৈশাখ | ২.৭৩ | ১২০-১৫০ | গাছ সম্পূর্ণ সবুজ, আগাম বপনযোগ্য, পাতা লম্বা, চওড়া বর্শাফলাকৃতির, গোড়ার দিক থেকে হঠাৎ মাথার দিক সরু হয়ে থাকে। বীজের রঙ সবুজ নীলাভ। উচচ ফলনশীল জাত। বীজের আকার ও-৪ জাতের চেয়ে ছোট। |
৩) ওএম-১ | ২৫ ফাল্গুন- ৩০ বৈশাখ | ২.৪৯ | ১২০-১৫০ | গাছ সম্পূর্ণ সবুজ, আলোক সংবেদনশীলতা কম, আগাম বপনযোগ্য, আঁশ উন্নতমানের, পাতার আকার তুলনামুলকভাবে বেশ বড় এবং ডিম্বাকৃতির, পাতার উপরিপৃষ্ঠ উজ্জ্বল চকচকে। বীজের রঙ গাঢ় খয়েরি, উচচফলনশীল জাত। |
৪) বিজেআরআই তোষা পাট-৪ (ও-৭২) | ১ চৈত্র - ১৫ বৈশাখ | ২.৯২ | ১২০-১৪০ | গাছ সম্পূর্ণ সবুজ, দ্রুত বর্ধনশীল, পাতা ডিম্বাকৃতি ও হাল্কা সবুজ, বীজের রঙ নীলাভ সবুজ, আগাম বপনযোগ্য। |
৫) বিজেআরআই তোষা পাট-৫ (ও-৭৯৫) (লাল তোষা) | ১৫ চৈত্র - ১৫ বৈশাখ | ৩.০০ | ১২০-১৩০ | গাছ লম্বা, মসৃণ, দ্রুত বর্ধনশীল, কান্ড লাল বা লালচে, পাতার বোঁটার উপর অংশ তামাটে লাল, উপপত্র স্পষ্ট লাল, পাতা লম্বা ও চওড়া, বীজের রঙ নীল, আঁশের রঙ উজ্জল সোনালী। |
৬) বিজেআরআই তোষা পাট-৬ (ও-৩৮২০) | ১৬ই চৈত্র- ১লা জ্যৈষ্ঠ | ৩.৫০ | ১৩০-১৩৫ | এ জাতটি আলোক সংবেদনশীল, গাছ সম্পূর্ণ সবুজ, পাতা লম্বা ও বল্লমাকৃতি। বীজের রং নীলাভ সবুজ, নাবীতে বপনোপযোগী, দ্রুত বর্ধনশীল, আগাম পরিপক্ক উচচ ফলনশীল। আঁশের মান ভাল এবং রং উজ্জ্বল সোনালী। |
৭) বিজেআরআই তোষা পাট-৭( এম জি - ১) | ১চৈত্র থেকে ১বৈশাখ | ২.৭০- ৩.৩০ | ১১০ | পাতা সবুজ ডিম্বাকৃতির লম্বাটে ও উপরিভাগ চকচকে। বীজের রং নীলাভ সমুজ যা ওএম-১ জাত থেকে ভিন্ন রঙের। |
৮। বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) | ১৫ চৈত্র থেকে ১৫ বৈশাখ | ৩.৩০-৩.৭০ | ১৫০-১৬০ | গাছ লম্বা (প্রচলিত জাত অপেক্ষা গড় উচ্চতা ৩০-৩৫ সেমি বেশী),দ্রুতবর্ধনশীল, আলোক প্রাপ্তি সাপেক্ষে কান্ড তামাটে থেকে গাঢ় লাল বর্ণের হয়, কান্ড অপেক্ষাকৃত সিলিন্ড্রিক্যাল, উপপত্রস্পষ্টলাল, পাতাচকচকে,বীজেররঙগাঢ় নীলাভ সবুজ, আগাম কর্তনযোগ্য, ছালে ফাইবার বান্ডেলের ঘনত্ব বেশী, উচ্চফলনশীল, আঁশ অধিকতর উজ্জল ও শক্ত। |
তোসা পাটের এই জাতগুলি বাংলাদেশের পাট চাষিদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং আঁশের গুণাগুণ মোকাবেলায় উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব নতুন জাত গ্রহণ দেশে উৎপাদিত পাটের আঁশের ফলন ও গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) দ্বারা উদ্ভাবিত জাতগুলি ছাড়াও তোষা পাটের বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত বা স্থানীয় জাত রয়েছে যা বাংলাদেশে চাষ করা হয়। বাংলাদেশে তোষা পাটের সাধারণভাবে পরিচিত কিছু ব্যক্তিগত বা স্থানীয় জাতের নাম এখানে দেওয়া হল:
CVL-1: এটি তোসা পাটের একটি ব্যক্তিগত জাত যা উচ্চ ফলন এবং ফাইবার মানের জন্য পরিচিত।
CVL-2: তোষা পাটের এই জাতের উচ্চ ফাইবার গুণমানের জন্য বাংলাদেশের কিছু এলাকায় চাষ করা হয়।
CVL-3: তোষা পাটের এই জাতটি কান্ড পচা এবং পাটের মালো সহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী।
বাসু-১: এটি তোষা পাটের একটি স্থানীয় জাত যা উচ্চ ফলন এবং আঁশের গুণমানের জন্য পরিচিত।
বরিশাল স্থানীয়: তোষা পাটের এই জাতটি বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলে চাষ করা হয় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিচিত।
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যক্তিগত বা স্থানীয় পাটের জাতগুলির গুণমান এবং কর্মক্ষমতা পরিবর্তিত হতে পারে, কারণ তারা বিজেআরআই দ্বারা উদ্ভাবিত জাতের মতো কঠোর পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন করেনি। যাইহোক, এই জাতগুলি এখনও বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে মূল্যবান এবং স্থানীয় অবস্থার সাথে তাদের অভিযোজনযোগ্যতার জন্য পছন্দ হতে পারে।
২।মেস্তা পাট: উচ্চ ফাইবার মানের জন্য এই জাতের পাট বাংলাদেশে জন্মে, তবে এটি সাধারণত তোষা বা সাদা পাটের মতো চাষ করা হয় না।
মেস্তা পাটের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে যা বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এবং অন্যান্য গবেষণা সংস্থা দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছে। এখানে কিছু সাধারণভাবে পরিচিত মেস্তা পাটের জাতগুলির নাম দেওয়া হল:
ফসল/জাত | বপন সময় | ফলন (টন/হেঃ) | জীবনকাল (দিন) | বৈশিষ্ট্য |
১) এইচএস-২৪ | ১ চৈত্র- ৩০ বৈশাখ | ২.৮৫ | ১৮০-২১০ | কান্ড গাঢ় কালচে সবুজ, পর্বে বেগুণী ছোপ, কান্ডের গায়ে ঘন রোম আছে। পাতা করতলাকৃতি গাঢ় সবুজ, ফুল হাল্কা হলদে রঙের ভেতরে মাঝখানে লালচে খয়েরী রঙের কেনাফের চেয়ে ছোট আকারের হয়ে থাকে। মেস্তার ফল ডিম্বাকৃতি ও শীর্ষভাগ সরু। ফলের রঙ লালচে দাগসহ হাল্কা সবুজ। বীজ কিডনি আকারের ও হাল্কা খয়েরি রঙ। এ জতটি নেমাটোড প্রতিরোধী। উঁচু, মাঝারি-উঁচু, খরা পীড়িত চর এলাকার পতিত বেলে জমিতে বপনযোগ্য। |
২)বিজেআরআই মেস্তা- ২ (সব্জী মেস্তা) | ১লা চৈত্র- ৩০শে জ্যৈষ্ঠ | পাতাঃ ৬.০০-৭.০০ বৃতিঃ ২.০-২.৫০ | ১৮০-২১০ | কান্ড তামাটে রঙের। পাতা ও বৃতি টক ও সুস্বাদু। পাতা ও বৃতি তরকারী রান্না করে খাওয়া যায়। বৃতি দিয়ে জেলি, জুস, জ্যাম, আচার ইত্যাদি কনফেকশনারী খাদ্য সামগ্রী তৈরী করা যায় এবং টক রান্না করে খাওয়া যায়। কান্ড, পাতা ও ফলে কাটা ও রোম নাই। উঁচু, মাঝারী-উঁচু জমিতে এবং বাড়ীর আঙ্গিনায় চাষ করা যায়। পাতা খন্ডিত, ফুল ক্রীম রঙ এর ভিতরে গাঢ় খয়েরী রঙের। ফল গাঢ় লাল। ফল থেকে বৃতি সংগ্রহ করে খাওয়া যায়। খরা সহনশীল ও নেমাটোড প্রতিরোধী। জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বীজ থেকে ২০% খাবার তেল পাওয়া যায়। |
মেস্তা পাটের ফলন, আঁশের গুণমান এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গবেষণা ও প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে এই মেস্তা পাটের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব জাত গ্রহণ বাংলাদেশে মেস্তা পাটের উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এবং অন্যান্য গবেষণা সংস্থা দ্বারা উদ্ভাবিত জাতগুলি ছাড়াও মেস্তা পাটের বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত বা স্থানীয় জাত রয়েছে যা বাংলাদেশের কৃষকরা চাষ করেন। এখানে মেস্তা পাটের কিছু ব্যক্তিগত বা স্থানীয় জাতের নাম দেওয়া হল:
দেশি মেস্তা: এটি স্থানীয়ভাবে চাষ করা মেস্তা পাটের একটি জাত যা উচ্চ ফলন এবং ফাইবার গুণমানের জন্য পরিচিত।
উত্তর মেস্তা: এটি স্থানীয়ভাবে চাষ করা মেস্তা পাটের আরেকটি জাত যা কীটপতঙ্গ ও রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি দড়ি ও সুতা তৈরির উপযোগীতার জন্য পরিচিত।
কৃষ মেস্তা: এটি মেস্তা পাটের একটি ব্যক্তিগত জাত যা বাংলাদেশের কিছু অংশে জন্মায় এবং উচ্চ ফলন ও ফাইবার গুণমানের জন্য পরিচিত।
ধান মেস্তা: এটি মেস্তা পাটের আরেকটি ব্যক্তিগত জাত যা বাংলাদেশের কৃষকরা চাষ করে এবং রোগ ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধের জন্য পরিচিত।
কাপাস মেস্তা: এটি এক ধরনের মেস্তা পাট যা বাংলাদেশের কিছু অংশে জন্মায় এবং ফাইবারের গুণমান এবং সূক্ষ্ম সুতায় প্রক্রিয়াকরণের জন্য উপযুক্ততার জন্য পরিচিত।
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে মেস্তা পাটের এই ব্যক্তিগত বা স্থানীয় জাতগুলি আনুষ্ঠানিক গবেষণা এবং প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্ভাবিত নাও হতে পারে এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি অবস্থান এবং চাষ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
৩।কেনফ পাট: বাংলাদেশে এই জাতের পাটের দীর্ঘতর তন্তুর জন্য চাষ করা হয়, যা উচ্চমানের টেক্সটাইল এবং কাগজের পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ফসল/জাত | বপন সময় | ফলন (টন/হেঃ) | জীবনকাল (দিন) | বৈশিষ্ট্য |
১) এইচসি-২ | ১ চৈত্র- ১৫ বৈশাখ | ৩.৩৫ | ১২৫-১৫৫ | কান্ড সবুজ আগার দিকে তামাটে লাল, কান্ড ও পাতায় রোম আছে, ফল ডিম্বাকৃতি, বীজ তিন কোণাকৃতি ধুসর বর্ণের। পাতা সবুজ এবং অখন্ড, পরিণত পাতার কিনারায় তামাটে লাল ছোপ থাকে। উঁচু নিচু সব জমিতেই বপন উপযোগী, দ্রুত বর্ধনশীল ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু। আঁশ উজ্জল। অধিক বায়োমাস সম্পূর্ণ এবং কাগজের মন্ড তৈরীর উপযোগী। ফুলের রঙ ক্রীম রঙ এর ভেতরে গাঢ় খয়েরী রঙ, উচচফলনশীল। |
২) এইচসি-৯৫ | ১৬ চৈত্র- ৩০ বৈশাখ | ৩.৪৫ | ১৫০-১৬০ | গাছ আকর্ষণীয় সবুজ, পাতা উজ্জ্বল সবুজ ও করতলাকৃতি। ফল ডিম্বাকৃতি, কান্ডে ও পাতায় হাল্কা রোম আছে। কেনাফ-এইচসি-২ এর চেয়ে অধিক বায়োমাস সম্পূর্ণ। আঁশ উজ্জ্বল। উঁচু, নিচু ও মাঝারি সব জমিতেই বপনোপযোগী। জলাবদ্ধতা সহনশীল। ফুলের রঙ ক্রীম রঙ এর ভিতরে হাল্কা হলুদ। |
৩) বিজেআরআই কেনাফ-৩ (বট কেনাফ) | ১লা চৈত্র- ৩০ বৈশাখ | ৩.৫০ | ১৫০-১৬০ | কান্ড সবুজ, কান্ডের আগার দিকে অনেক উপপত্র থাকে এবং আগার দিকটা অপেক্ষাকৃত মোটা, পরিণত বয়সে সূর্য্যের আলোতে কান্ড হাল্কা তামাটে রঙ ধারন করতে পারে। কান্ড, পাতা ও ফল অল্প কাটা ও রোম আছে। পাতা অখন্ড, বট পাতার ন্যায়। দ্রুত বর্ধনশীল, দীর্ঘ বপনকাল, জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু, অধিক ফলনশীল ও বায়োমাস সম্পন। উঁচু, নীচু, পাহাড়ী, চরাঞ্চল ও উপকুলীয় অঞ্চলে বপনোপযোগী। ফুলের রঙ হাল্কা ক্রীম রঙের মাঝখানে গাঢ় খায়েরী রঙ। ফল ডিম্বাকৃতি, বীজ তিন কোনাকৃতি ধুসর বর্ণের। |
৩) বিজেআরআই কেনাফ-৪ (লাল কেনাফ) | ১লা চৈত্র- ৩০ বৈশাখ | ৩.৬০ | ১৪৫-১৫৫ | কান্ড লাল, পাতার রঙ খয়েরি সবুজ ও করতলাকৃতি এবং পাতার বোঁটার উপরিভাগ লাল রঙ। দ্রুত বর্ধনশীল, দীর্ঘ বপনকাল, জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু, অধিক ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা কেনাফের অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশী। আঁশের মান ভাল এবং রং মাখন সাদা। চরাঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চলে বপন উপযোগী। ফুলের রঙ হাল্কা ক্রীম রঙের মাঝখানে গাঢ় খায়েরী রঙ। ফল ডিম্বাকৃতি, বীজ তিন কোনাকৃতি ধুসর বর্ণের। |
৪।দেশি পাট: এটি একটি ঐতিহ্যবাহী পাটের জাত যা এখনও বাংলাদেশের কিছু এলাকায় চাষ করা হয়। নতুন পাটের জাতগুলির তুলনায় এটির ফলন এবং ফাইবারের গুণমান কম, তবে এটি এখনও সাংস্কৃতিক তাত্পর্যের জন্য মূল্যবান।
ফসল/জাত | বপন সময় | ফলন (টন/হেঃ) | জীবনকাল (দিন) | বৈশিষ্ট্য |
১) ডি-১৫৪-২ | ১৫ চৈত্র-৩০ চৈত্র | ২.২৪ | ১২০-১৩০ | গাছের কান্ড ও পাতা ঘন সবুজ, পাতার আকার ডিম্বাকৃতি, দৈর্ঘ-প্রস্থের অনুপাত 2:1। বোঁটার উপরিভাগ হাল্কা তামাটে। অন্যান্য জাতের চেয়ে কান্ডের গোড়া অপেক্ষাকৃত মোটা। পরিণত বয়সে কান্ডের আগায় ও ডালে তামাটে রঙ দেখা দেয়। |
২) সিভিএল-১ | ১৫ চৈত্র-১৫ বৈশাখ | ২.৪৬ | ১২০-১৩০ | কান্ড সম্পূর্ণ সবুজ এবং পাতাও আকর্ষণীয় সবুজ ও বর্শাফলাকৃতি, উচচ ফলনশীল, সর্বাধিক জনপ্রিয় জাত। |
৩) সিভিই-৩ | ১৫ চৈত্র-৩০ চৈত্র | ১.৯৭ | ১০৫-১১০ | এ জাতের কান্ড সম্পূর্ণ সবুজ কিন্তু পাতার বোটার উপরি ভাগ উজ্জল তামাটে রঙ দেখা যায়। পরিণত বয়সে গাছের ডালে তামাটে রঙ দেখা যায়। পাতা হাল্কা সবুজ, সিভিএল-১ এর চেয়ে সরু, ছোট ও বর্শাফলাকৃতি । |
৪) সিসি-৪৫ | ১ ফাল্গুন-১৫ বৈশাখ | ২.৪৯ | ১৩৫-১৮০ | আগাম বপনোপযোগী, কান্ড সবুজ, পাতা চওড়া উজ্জ্বল সবুজ ও ডিম্বাকৃতি, বোঁটার উপরিভাগে হাল্কা তামাটে রঙ থাকে।এ গাছে ফুল আসতে ১৫০ দিনের অধিক সময় লাগে। |
৫) বিজেআরআই দেশী পাট-৫ (বিজেসি-৭৩৭০) | ১চৈত্র - ১ বৈশাখ | ২.৪৫ | ১০৫-১১৫ | আশু বপনোপযোগী, গাছের কান্ড সবুজ, পাতার বোঁটার উপরিভাগ হাল্কা তামাটে রঙ। পাতার আকার সিভিএল-১ এর মতো তবে তার চেয়ে ছোট। |
৬) বিজেআরআই দেশী পাট-৬ (বিজেসি-৮৩) | ১৫ চৈত্র-১৫ বৈশাখ | ২.১২ | ৯৫-১০০ | গাছ সম্পূর্ণ সবুজ। আশু পরিপক্ক, পাতা সিভিএল-১ জাতের চেয়ে সরু ও পাতার ফলকের কিনারা ঢেউ খোলানো। বপনের ৯০-৯৫ দিনে ফুল আসে। তে-ফসলি শস্যক্রমের জন্য খুবই উপযোগী। |
৭) বিজেআরআই দেশী পাট-৭ (বিজেসি-২১৪২) | ১ চৈত্র-১ বৈশাখ | ২.৫০ | ১০০-১১০ | গাছ সম্পূর্ণ সবুজ। পাতার আকৃতি লেন্সিওলেট(বল্লম আকৃতি), বীজের রঙ নীল, অন্যান্য দেশী জাতের চেয়ে ভিন্ন। আঁশ উজ্জ্বল সাদা বর্ণের, ফলে ব্লিচিং খরচ কম। আলু চাষের জমিতে এ জাত বপন না করাই শ্রেয়ঃ। |
৮) বিজেআরআই দেশী পাট-৮ (বিজেসি-২১৯৭) | ১৫ চৈত্র-১৫ বৈশাখ | ৩.০০ | ১১০-১১৫ | এ জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল, মৃদু লবণাক্ততা সহিষ্ণু ও মোজাইক রোগ প্রতিরোধী। কান্ড হাল্কা লাল, পাতা লম্বা ও বল্লম আকৃতি, পাতার বোঁটার উপরিভাগ উজ্জ্বল তামাটে লাল এবং নিম্নভাগে বোঁটা ও ফলকের সংযোগ স্থলে আংটির মত গাঢ় লাল রংয়ের গোল দাগ আছে। |
৯) বিজেআরআই দেশী পাট-৯ (বিজেসি-৫০০৩) | ১৫ চৈত্র-১ বৈশাখ | ২.৬০-৩.০০ | ১০০-১১০ | গাছ সবুজ । স্বল্প মেয়াদী জাত, পাতার বোর্টাঁর উপরিভাগ হালকা লাল রঙ, পাতা বল্মাকৃতির, জাতটির আঁশ তুলতামুলকভাবে সাদা ও কম কাটংস যুক্ত। |
১০) বিজেআরআই দেশী পাট শাক-১ (বিজেসি-৩৯০) | ১৫ ফাল্গুন-১৫ ভাদ্র | শাকঃ ৩.০০-৩.৫০ | পাতাঃ ৩৫-৪৫ ফুলঃ ৪৫-৬০ | গাছ সম্পূর্ণ সবুজ, ঝোপালো ও খর্বাকৃতির, কান্ড হালকা সবুজ ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। পাতা বর্শা ফলাকৃতির ও গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা মিষ্টি ও সুস্বাদু। |
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এবং অন্যান্য গবেষণা সংস্থা দ্বারা উদ্ভাবিত জাতগুলি ছাড়াও দেশি পাটের বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত বা স্থানীয় জাত রয়েছে যা বাংলাদেশের কৃষকরা চাষ করেন। দেশি পাটের কিছু ব্যক্তিগত বা স্থানীয় জাতের নাম এখানে দেওয়া হল:
কোলশী দেশি: এটি স্থানীয়ভাবে চাষ করা দেশি পাটের একটি জাত যা উচ্চ ফলন এবং ফাইবার গুণমানের জন্য পরিচিত।
ছোট দেশি: এটি দেশি পাটের আরেকটি স্থানীয়ভাবে চাষ করা জাত যা কীটপতঙ্গ ও রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি দড়ি ও সুতা তৈরির জন্য উপযুক্ততার জন্য পরিচিত।
লঙ্কাদেশী: এটি দেশি পাটের একটি ব্যক্তিগত জাত যা বাংলাদেশের কিছু অংশে জন্মায় এবং উচ্চ ফলন এবং ফাইবার গুণমানের জন্য পরিচিত।
আড়ং দেশি: এটি দেশি পাটের আরেকটি ব্যক্তিগত জাত যা বাংলাদেশের কৃষকরা চাষ করে এবং রোগ ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধের জন্য পরিচিত।
রাইমা দেশি: এটি এক ধরনের দেশি পাট যা বাংলাদেশের কিছু অংশে জন্মায় এবং ফাইবারের গুণমান এবং সূক্ষ্ম সুতাতে প্রক্রিয়াকরণের উপযুক্ততার জন্য পরিচিত।
এটা লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে দেশি পাটের এই ব্যক্তিগত বা স্থানীয় জাতগুলি আনুষ্ঠানিক গবেষণা এবং প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্ভাবিত নাও হতে পারে এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি অবস্থান এবং চাষ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। যাইহোক, তারা বাংলাদেশের পাট শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং দেশে চাষ করা পাটের বৈচিত্র্যের জন্য অবদান রাখে।