ভূট্টার জন্য জমি প্রস্তুতি এবং সার ও পানি ব্যবস্থাপনা
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।
মাটি চাষ দেয়াঃভূট্টা চাষের জন্য জমি ভালো ভাবে প্রস্তুত করা খুব জরুরি। জমি বিভিন্ন ভাবে প্রস্তুতি করা যায়।যেমন-
১।কৃষক পদ্ধতিঃএ পদ্ধতিতে কৃষক জমি দেশিয় লাঙল,বড় ট্রাক্টর,মিনি ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদির মাধ্যমে ৩-৪বার চাষ করে থাকে।তারপর জমিতে সারি করে বীজ বোপন করে।এতে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে খরচ একটু বেশি হয়ে থাকে।
২।স্বল্প চাষ পদ্ধতিঃএই পদ্ধতিতে শুধু একটা চাষের মাধ্যমে বীজ বোপন করা হয়।তবে বীজ কোন বেড আকারে বোপন করা হয় না।
৩।বেড পদ্ধতিঃএটি বেড প্লান্টিং মেশিনের সাহায্যে খুব কম খরচে কৃষক ভুট্টা রোপন করতে পারে। এটি বেড আকারে থাকায় পানি খরচ ও কম লাগে।অনেক পানি সাশ্রয়ি হয়।
।
৪।স্ট্রিপ চাষ পদ্ধতিঃএই পদ্ধতিতে শুধু যে লাইনে ভুট্টা বোপন করা হবে সেই লাইনটাই চাষ করা হয়।বাকি যায়গা চাষ করা হয় না।এতে জমি উর্বর থাকে।
বপনের সময়ঃ বাংলাদেশে রবি মৌসুমে মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে(বারি হাইব্রিড ভূট্টা -১৭,ডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভূট্টা-১,ডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভূট্টা-২) ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারী-মার্চ) পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বীজ বপনের হার ও দূরত্ব
শুভ্রা, বর্ণালী ও মোহর জাতের ভুট্টার জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ কেজি এবং খইভুট্টা জাতের জন্য ১৫ থেকে ২০ কেজি হারে বীজ প্রয়োজন হবে। ভুট্টার বীজ সারিতে বুনতে হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং সারিতে ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুইটি গাছ রাখতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা
ফসলের ভালো ফলনের জন্য সার ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। ভুট্টার ক¤েপাজিট জাতের জন্য প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ১৭২ থেকে ৩১২ কেজি এবং খরিফ মৌসুমে ২১৬ থেকে ২৬৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়। হাইব্রিড জাতের জন্য রবি মৌসুমে এ চাহিদা ৫০০ থেকে ৫৫০ কেজি। ক¤েপাজিট জাতের জন্য প্রতি হেক্টরে টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বোরিক এসিড ও গোবর সার প্রয়োজন রবি মৌসুমে যথাক্রমে ১৬৮ থেকে ২১৬ কেজি, ৯৬ থেকে ১৪৪ কেজি, ১৪৪ থেকে ১৬৮ কেজি, ১০ থেকে ১৫ কেজি, ৫ থেকে ৭ কেজি ও ৪ থেকে ৬ টন এবং খরিফ মৌসুমে যথাক্রমে ১৩২ থেকে ২১৬ কেজি, ৭২ থেকে ১২০ কেজি, ৯৬ থেকে ১৪৪ কেজি, ৭ থেকে ১২ কেজি, ৫ থেকে ৭ কেজি ও ৪ থেকে ৬ টন। হাইব্রিড জাতের জন্য রবি মৌসুমে প্রয়োজন ২৪০ থেকে ২৬০ কেজি টিএসপি, ১৮০ থেকে ২২০ কেজি এমওপি, ২৪০ থেকে ২৬০ কেজি জিপসাম, ১০ থেকে ১৫ কেজি জিংক সালফেট, ৫ থেকে ৭ কেজি বোরিক এসিড এবং ৪ থেকে ৬ টন গোবর সার। জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে মোট ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান ২ ভাগ করে প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫ থেকে ৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০ থেকে ৫০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
সেচপ্রয়োগ
উচ্চফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। উদ্ভাবিত জাতে নিম্নরূপ ৩-৪টি সেচ দেয়া যায়।
প্রথম সেচ: বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে (৪-৬ পাতা পর্যায়)
দ্বিতীয় সেচ:বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে (৮-১২পাতা পর্যায়)
তৃতীয় সেচ:বীজ বপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে (মোচা বের হওয়া পর্যায়)
চতুর্থ সেচ:বীজ বপনের ৮৫-৯৫ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার পূর্ব পর্যায়)
ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোন ক্রমেই জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।