মসুরের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমন এবং তাদের প্রতিকার


May 21, 2023
কৃষি সম্পর্কিত
মসুরের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমন এবং তাদের প্রতিকার

     মসুরের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমন এবং তাদের প্রতিকার 


১।রোগের নামঃ

মসুরের মোজাইক রোগ (ভাইরাসজনিত রোগ)

লক্ষণঃ

  • এ রোগ হলে পাতায় সবুজ- হলুদের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়।

  • গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।

  • গাছ ঝোপালো হয়ে যায় ।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।

  • আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না

  •  রোগমুক্ত বীজ বপন করুন।


২।রোগের নামঃ

মসুরের হোয়াইট মোল্ড রোগ (ছত্রাকজনিত রোগ)

লক্ষণঃ

  • ছক্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।

  • এতে পাতার বোটায়, কান্ডে সাদা তুলার মত বস্তু দেখা যায় এবং আক্রান্ত অংশ পচে যায় ।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • প্রাথমিক অবস্থায় সম্ভব হলে আক্রান্ত অংশ অপসারণ করা।

  • প্লাবন সেচ দেয়া।

  • বীজ লাগানোর আগে গভীরভাবে চাষ দিয়ে জমি তৈরী করা ।

  • আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

  • শস্য পর্যায় অনুসরন করুন।

  •  বপনের পূর্বে কেজি প্রতি ২.৫ গ্রাম প্রোভ্যাক্স বা কর্বেন্ডাজিম মিশিয়ে বীজ শোধন করুন।

  • প্রপিকোনাজলগ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করা।


৩।রোগের নামঃ

   মসুরের এনথ্রাকনোজ রোগ (ছত্রাকজনিত রোগ)

লক্ষণঃ

  • চারা আবস্থায় ও ফুল আসার আগে এ রোগের আক্রমণ হয় ও বেশী আক্রমণে গাছ মারা যায়।

  • নিচের পত্রফলকে চকলেট রং এর ফ্যাকাসে দাগ দেখা যায়।

  • কান্ডেও এনথ্রাকনোজ রোগের লক্ষণ দেখা যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।

  • কপার অক্সক্লোরাইট প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করা ।

  • আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

  • শস্য পর্যায় অনুসরন করুন।

  • বপনের পূর্বে কেজি প্রতি ২.৫ গ্রাম প্রোভ্যাক্স বা কর্বেন্ডাজিম মিশিয়ে বীজ শোধন করুন।


৪।রোগের নামঃ

মসুরের গোড়া পচা রোগ Collar Rot of Lentil (Sclerotium rolfsii & Fusarium oxysporum f.   sp. lentis) ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • চারা ও বয়স্ক অবস্থায় এ রোগের আক্রমণ হয় ও বেশী আক্রমণে গাছ মারা যায়।

  • বয়স্ক গাছ হলুদ রং হয়। আক্রান্ত গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়।

  • চারা অবস্থায় এ রোগ হলে গাছ হঠাৎ করে মারা যায়।

  • পাতা ক্রমান্বয়ে হলুদ রং ধারণ করে, গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়।

  • গাছের গোড়ায় সাদা মাইসেলিয়াম ও সরিষাকৃতির স্কেলেরোশিয়াম দেখা যায়।।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।

  • অধিক পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করা।

  • জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখা।

  • বীজ বপনের ২১ দিন আগে মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন প্রতি হেক্টর হারে জমিতে প্রয়োগ করা।

  • প্রোভেক্স ০.২৫% দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করা।

  • বপনের ২৫ এবং ৪০ দিন পর প্রোভেক্স ০.২৫% দ্বারা মাটি ভিজিয়ে দেয়া।


৫।রোগের নামঃ

মসুরের মরিচা রোগ Rust Disease of Lentil (Uromyces vicia-favae) ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • রোগ বয়স্ক গাছ, ফুল ও শুটি আসার সময় দেখা যায়।

  • আক্রান্ত গাছের পাতায় বিভিন্ন আকৃতির ছোট ছোট মরিচা রংয়ের গুটি দেখা যায়।

  • পরবর্তিতে বাদামী ও কালো রং ধারণ করে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • ফসলে পরিত্যাক্ত অংশ পুড়ে বা নষ্ট করা।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা (বারি মসুর- ৩ ও ৪)।

  • সুষম সার ব্যবহার করা।

  • নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহে বীজ বপন করা।

  • রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি বা ক্যালিক্সিন ১ মিলি মিশিয়ে ১০-১২ দনি অন্তর স্প্রে করা।


৬।রোগের নামঃ

মসুরের স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ Stemphylium Blight of Lentil (Stemphylium botryosum) ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • মধ্য বয়স থেকে শুরু করে বয়স্ক গাছে যে কোন সময় এরোগ দেখা যায়।

  • রোগের প্রাথমিক অবস্থায় পাতার উপর হালকা বাদামী বা শুকনা খড়ের রঙের ন্যায় সূঁচের অগ্রভাগ আকারের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়।

  • দাগগুলো আকারে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ পাতা আক্রান্ত হয়ে ঝরে পড়ে।

  • ধীরে ধীরে নতুন নতুন শাখার অগ্রভাগও আক্রান্ত হয় এবং শুকিয়ে মরে যায়।

  • আক্রমণের প্রকোপ বেশি হলে সমগ্র ফসলের মাঠে ঝলসানো মনে হয়। তবে ফলগুলি তখনও সবুজ থেকে যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • মসুরের রোগ প্রতিরোধ জাত বা উন্নত জাত বারি মসুর-৪ এর চাষ করা।

  • আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।

  • সুষম সার ব্যবহার করা।

  • অতিরিক্ত সেচ পরিহার করা।

  • অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মসুর বীজ বপন করা।

  • সিকিউর ৬০০ ডব্লিউ জি বা রোভরাল-৫০ ডব্লিউ পি বা কম্প্যানিয়ন ০.২% বা নিম পাতার রস স্প্রে করা।

  • কম্প্যানিয়ন (০.২%) হারে স্প্রে করলে এ রোগের আক্রমণ কম হয় এবং ভাল ফলন পাওয়া যায়।

  • মসুরে ফুল আসা শুরু করলেই প্রতিষেধক হিসেবে টেবুকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ফলিকুর-২৫০ ই ডব্লিউ ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার পাতায় স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া নাটিভো স্প্রে করলেও এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


৭।মসুরের জাবপোকা

 জাবপোকা মসুরের পাতা, কান্ড, পুষ্পমঞ্জরী ও ফলে আক্রমণ করে থাকে এবং সেখান থেকে রস চুষে খায়। মারাত্মক আক্রমণে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন ব্যাহত হয়। মারাত্মক আক্রমণে ডায়মেথয়েট জাতীয় কীটনাশক (যেমন- টাফগর ৪০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

                                             (তথ্য সূত্রেঃplant disease clinic SAU  ওয়েবসাইট)



Recent Posts

ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট(BLB)

Apr 17, 2024
ফসলের রোগ-বালাই