মসুরের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমন এবং তাদের প্রতিকার
মসুরের মোজাইক রোগ (ভাইরাসজনিত রোগ)
এ রোগ হলে পাতায় সবুজ- হলুদের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়।
গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
গাছ ঝোপালো হয়ে যায় ।
আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।
আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না
রোগমুক্ত বীজ বপন করুন।
মসুরের হোয়াইট মোল্ড রোগ (ছত্রাকজনিত রোগ)
ছক্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।
এতে পাতার বোটায়, কান্ডে সাদা তুলার মত বস্তু দেখা যায় এবং আক্রান্ত অংশ পচে যায় ।
প্রাথমিক অবস্থায় সম্ভব হলে আক্রান্ত অংশ অপসারণ করা।
প্লাবন সেচ দেয়া।
বীজ লাগানোর আগে গভীরভাবে চাষ দিয়ে জমি তৈরী করা ।
আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
শস্য পর্যায় অনুসরন করুন।
বপনের পূর্বে কেজি প্রতি ২.৫ গ্রাম প্রোভ্যাক্স বা কর্বেন্ডাজিম মিশিয়ে বীজ শোধন করুন।
প্রপিকোনাজলগ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করা।
মসুরের এনথ্রাকনোজ রোগ (ছত্রাকজনিত রোগ)
চারা আবস্থায় ও ফুল আসার আগে এ রোগের আক্রমণ হয় ও বেশী আক্রমণে গাছ মারা যায়।
নিচের পত্রফলকে চকলেট রং এর ফ্যাকাসে দাগ দেখা যায়।
কান্ডেও এনথ্রাকনোজ রোগের লক্ষণ দেখা যায়।
আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।
কপার অক্সক্লোরাইট প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করা ।
আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
শস্য পর্যায় অনুসরন করুন।
বপনের পূর্বে কেজি প্রতি ২.৫ গ্রাম প্রোভ্যাক্স বা কর্বেন্ডাজিম মিশিয়ে বীজ শোধন করুন।
মসুরের গোড়া পচা রোগ Collar Rot of Lentil (Sclerotium rolfsii & Fusarium oxysporum f. sp. lentis) ছত্রাকজনিত রোগ।
চারা ও বয়স্ক অবস্থায় এ রোগের আক্রমণ হয় ও বেশী আক্রমণে গাছ মারা যায়।
বয়স্ক গাছ হলুদ রং হয়। আক্রান্ত গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়।
চারা অবস্থায় এ রোগ হলে গাছ হঠাৎ করে মারা যায়।
পাতা ক্রমান্বয়ে হলুদ রং ধারণ করে, গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়।
গাছের গোড়ায় সাদা মাইসেলিয়াম ও সরিষাকৃতির স্কেলেরোশিয়াম দেখা যায়।।
আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।
অধিক পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করা।
জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখা।
বীজ বপনের ২১ দিন আগে মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন প্রতি হেক্টর হারে জমিতে প্রয়োগ করা।
প্রোভেক্স ০.২৫% দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করা।
বপনের ২৫ এবং ৪০ দিন পর প্রোভেক্স ০.২৫% দ্বারা মাটি ভিজিয়ে দেয়া।
মসুরের মরিচা রোগ Rust Disease of Lentil (Uromyces vicia-favae) ছত্রাকজনিত রোগ।
রোগ বয়স্ক গাছ, ফুল ও শুটি আসার সময় দেখা যায়।
আক্রান্ত গাছের পাতায় বিভিন্ন আকৃতির ছোট ছোট মরিচা রংয়ের গুটি দেখা যায়।
পরবর্তিতে বাদামী ও কালো রং ধারণ করে।
ফসলে পরিত্যাক্ত অংশ পুড়ে বা নষ্ট করা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা (বারি মসুর- ৩ ও ৪)।
সুষম সার ব্যবহার করা।
নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহে বীজ বপন করা।
রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি বা ক্যালিক্সিন ১ মিলি মিশিয়ে ১০-১২ দনি অন্তর স্প্রে করা।
মসুরের স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ Stemphylium Blight of Lentil (Stemphylium botryosum) ছত্রাকজনিত রোগ।
মধ্য বয়স থেকে শুরু করে বয়স্ক গাছে যে কোন সময় এরোগ দেখা যায়।
রোগের প্রাথমিক অবস্থায় পাতার উপর হালকা বাদামী বা শুকনা খড়ের রঙের ন্যায় সূঁচের অগ্রভাগ আকারের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়।
দাগগুলো আকারে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ পাতা আক্রান্ত হয়ে ঝরে পড়ে।
ধীরে ধীরে নতুন নতুন শাখার অগ্রভাগও আক্রান্ত হয় এবং শুকিয়ে মরে যায়।
আক্রমণের প্রকোপ বেশি হলে সমগ্র ফসলের মাঠে ঝলসানো মনে হয়। তবে ফলগুলি তখনও সবুজ থেকে যায়।
মসুরের রোগ প্রতিরোধ জাত বা উন্নত জাত বারি মসুর-৪ এর চাষ করা।
আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।
সুষম সার ব্যবহার করা।
অতিরিক্ত সেচ পরিহার করা।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মসুর বীজ বপন করা।
সিকিউর ৬০০ ডব্লিউ জি বা রোভরাল-৫০ ডব্লিউ পি বা কম্প্যানিয়ন ০.২% বা নিম পাতার রস স্প্রে করা।
কম্প্যানিয়ন (০.২%) হারে স্প্রে করলে এ রোগের আক্রমণ কম হয় এবং ভাল ফলন পাওয়া যায়।
মসুরে ফুল আসা শুরু করলেই প্রতিষেধক হিসেবে টেবুকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ফলিকুর-২৫০ ই ডব্লিউ ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার পাতায় স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া নাটিভো স্প্রে করলেও এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৭।মসুরের জাবপোকা:
জাবপোকা মসুরের পাতা, কান্ড, পুষ্পমঞ্জরী ও ফলে আক্রমণ করে থাকে এবং সেখান থেকে রস চুষে খায়। মারাত্মক আক্রমণে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন ব্যাহত হয়। মারাত্মক আক্রমণে ডায়মেথয়েট জাতীয় কীটনাশক (যেমন- টাফগর ৪০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
(তথ্য সূত্রেঃplant disease clinic SAU ওয়েবসাইট)