পাটের আঁশ ছড়ানোর কৌশল


May 21, 2023
কৃষি সম্পর্কিত
পাটের আঁশ ছড়ানোর কৌশল

পাটের আঁশ ছড়ানোর কৌশল

পাট কাটাঃ সাধারণত ভালো ফলন ও উন্নত মানের আঁশের জন্য ক্ষেতের শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগ গাছে ফুলের কুঁড়ি দেখা দিলে (সাধারণত ১১০-১২০ দিনে প্রায় ৫০% গাছে ফুল আসে) পাট কাটা উচিত। উল্লেখিত সময়ের পূর্বে পাট কাটলে আঁশের মান ভালো থাকে, কিন্তু ফলন কম হয়। আবার দেরিতে কাটলে ফলন বেশি হয় কিন্তু আঁশের মান খুব খারাপ হয়।


সংগ্রহত্তোর কার্যাবলিঃ পাট কাটার পর ছোট-চিকন ও  মোটা পাটগুলো আলাদা আলাদা আঁটি বেঁধে পাতা ঝরানোর জন্যে পাতার অংশ খড়-কুটা দিয়ে ৭২ ঘন্টা (৩ দিন) ঢেকে রাখলে পাতা ঝরে যায়। অতঃপর আঁটিগুলোর গোড়া ৭০-৯০ ঘন্টা (৩-৪ দিন) পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।


জাগ তৈরিকরণঃ পরিস্কার ও অল্প স্রোত আছে এমন পানিতে জাগ দিতে হবে। জাগের আকার যদি চৌকাকার বা আয়তাকার হয় তবে প্রথমে নির্দিষ্ট মাপ মোতাবেক এক স্তর আটি পাশাপাশি গোড়া-মাথা করে বিছানো ও বাঁধা হয়। প্রথম স্তর আঁটি সাজানোর পর আড়াআড়ি ভাবে দ্বিতীয় স্তর আঁটি ১ম স্তরের নিয়মে সাজানো ও বাঁধা হয়। বদ্ধ পানিতে পাট পঁচালে প্রতি ১০০ আঁটি পাটের জন্য ১ কেজি ইউরিয়া সার সরাসরি জাগের আঁটির সারিতে ছিটিয়ে দিতে হয়। এতে পাট তাড়াতাড়ি পঁচে এবং আঁশের মান ভালো হয়।


জাগ ডুবানোঃ জাগ এমন ভাবে ডুবাতে হবে যেন জাগের উপর ৩-৪ ইঞ্চি এবং নীচে কমপক্ষে ২০-২৫ ইঞ্চি পানি থাকে। জাগের উপর কচুরীপানা বা খড়-কুটা বিছিয়ে তার উপর পাথর বা কংক্রিটের চৌকা চাকতি দিয়ে অথবা খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে জাগ ডুবানো উচিত। জাগ ডুবানোর জন্য কখনও জাগের উপর মাটির চাক বা কলাগাছ বা কাঠের গুঁড়ি দেয়া উচিত নয়। কারণ তাতে আঁশের বর্ণ কালচে হয়ে যেতে পারে।


পচন বুঝার উপায়ঃ জাগ দেয়ার ৮-১০ দিন পর থেকেই পচন পরীক্ষা করা উচিত। পচন পরীক্ষার জন্য ২-৩ টি পাট জাগের আঁটি থেকে বের করে তার মধ্যাংশ থেকে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ছাল কেটে একটি ছোট শিশির ভিতর পানি দিয়ে ঝাঁকানোর পর শিশির পানি ফেলে আবার পরিস্কার পানি দিয়ে ঝাঁকিয়ে য়দি দেখা যায় যে, আঁশগুলো বেশ পৃথক হয়ে গেছে, তখন বুঝতে হবে জাগের পচন শেষ হয়েছে। তাছাড়া ২/৩ টা পচনশীল পাট গাছের ছাল ধুয়ে পরীক্ষা করেও দেখা যেতে পারে।


ছাল পচানো পদ্ধতিঃ


 ক.  প্রচলিত পাট পচন ব্যবস্থাপনা
পাট গাছে যখন ফুলের কুঁড়ি আসে তার অগেই পাট কাটা উচিত। এ সময় পাট কাটলে আঁশের মান ও ফলন ভালো হয়, গোড়ায় তেমন কাটিংস বা শক্ত অংশ থাকে না। তবে আমাদের দেশের পাটের জাতগুলো মোটামুটি ১১০-১২০ দিন বয়সে কাটতে হবে। যেহেতু চিকন পাট পচতে সময় কম এবং মোটা পাট পচতে সময় বেশি লাগে, তাই চিকন ও মোটা পাট আলাদা ভাবে আঁটি বেঁধে  আলাদাভাবে জাগ দিতে হবে। পাটের জমি শুকনো থাকলে জমিতেই অথবা জমিতে সামান্য পানি থাকলে পাট কেটে আঁটিগুলো নিকটস্থ শুকনো জায়গায় সম্ভব মতো ৩-৪ দিন স্তূপ করে রেখে পাতা ঝরাতে হবে এবং এরপর পাটের  গোড়ার দেড় ফুট পরিমাণ অংশ ৩-৪ দিন পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে পাতা পচে পচন পানি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না এবং গোড়ায় কাটিংসের পরিমাণ কম হয়। তবে পাটের জমিতে প্রচুর পানি থাকলে পাটের পাতা ঝরানো বা গোড়া ডুবানোর প্রয়োজন নেই। সে ক্ষেত্রে পাট কেটে সরাসরি জমিতেই জাগ দিতে হবে। যথাসম্ভব পরিষ্কার এবং অল্প স্রোতযুক্ত পানিতে পাট পচানো উচিত। পাটের আঁটিগুলো প্রথম সারিতে লম্বালম্বিভাবে, দ্বিতীয় সারিতে আড়াআড়িভাবে এবং পুনরায় লম্বালম্বিভাবে সাজাতে হবে। এতে জাগের মধ্যে পাট পচন জীবাণু সহজে চলাফেরা করতে পারে এবং পচন তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হয়। পাটের জাগে সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সারগুলো পানিতে ছিটিয়ে দিলে পচন প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি হয়। জাগ ডুবানো/ঢাকার জন্য জলজ উদ্ভিদ, কংক্রিটের স্ল্যাব বা বাঁশ ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে কখনও মাটি বা কলাগাছ ব্যবহার করা যাবে না। পচন সমাপ্তি নির্নয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাজেই জাগ দেয়ার ১০-১২ দিন পর থেকে ২-১টা পচা পাট গাছ বের করে ধুয়ে দেখতে হবে যে, আঁশগুলো পচে পরস্পর পৃথক হয়েছে কিনা। পৃথক হলে বুঝতে হবে, পচন শেষ হয়েছে এবং সাথে সাথে সব পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ফেলতে হবে। পাট একটু বেশি পচানোর চেয়ে একটু কম পচানো ভালো। আঁশ ছাড়ানোর পূর্বে পাটের গোড়ার অংশ হাত দিয়ে চিপে টেনে ফেলে দিয়ে বা বাঁশ-কাঠের হাতুড়ি দিয়ে থেতলে নিয়ে আঁশ ছাড়ালে আঁশের গোড়ায় শক্ত অংশ বা কাটিংসের পরিমাণ কম হয়। যথাসম্ভব পরিষ্কার পানিতে আঁশ ধোয়া উচিত। আঁশ মাটিতে না শুকিয়ে বাঁশের আড়ায় বা ঘরের চালে বা গাছের ডালে বা ব্রিজের রেলিংয়ে বিছিয়ে দিয়ে ভালোভাবে শুকানো উচিত। লক্ষ্য রাখতে হবে আঁশে যেন ময়লা বা ধুলাবালি লেগে না থাকে। এভাবে পচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাট আঁশ ভালোভাবে শুকিয়ে গুদামজাত করা হয়। ভিজা আঁশ কখনও গুদামজাত করা উচিত নয়। কারণ এতে আঁশের মান নষ্ট হয়ে যায়।
 

খ. স্বল্প পানি অঞ্চলে পাট পচন ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশের অনেক অঞ্চেলে অনেক পাট জন্মে, কিন্তু পাট পচনের প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত পানির অভাবে ওইসব এলাকায় উৎপাদিত পাট আঁশের অধিকাংশই অত্যন্ত নিম্নমানের হয়। আমরা জানি যে, আঁশের গুণাগুণের ওপর পাটের মূল্য নির্ভর করে। কি কারণে পাট আঁশের গুণাগুণ খারাপ হয়, এ ব্যাপারে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। দেখা গেছে, বিশেষ করে পাট পচন পদ্ধতির তারতম্যের কারণেই পাট আঁশের গুণাগুণের তারতম্য হয়। যেহেতু পাট পচন প্রক্রিয়া পানিতে সম্পন্ন হয়, তাই পাট পচন ও আঁশের গুণাগুণ মূলত পচন পানির ওপর নির্ভরশীল। দেশের বিভিন্ন পাট উৎপাদনকারী এলাকার পাট পচন সমস্যা বিভিন্ন। তাই সেসব এলাকায় প্রচুর পাট উৎপন্ন হয়, অথচ প্রয়োজনীয় পচন পানির অভাবে চাষি ভাইয়েরা পাট সঠিকভাবে পচাতে পারছেন না, ফলে উৎপাদিত আঁশের মান অত্যন্ত নিম্নমানের হচ্ছে- সেসব এলাকার পাট পচন সমস্যার সমাধানকল্পে দীর্ঘদিন গবেষণার পর বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে ওইসব এলাকার চাষি ভাইদের জন্য বাঁশের হুকের সাহায্যে ‘পাটের ছালকরণ (রিবনিং) ও ছাল পচন (রিবন রেটিং) পদ্ধতি’ উদ্ভাবন করেছে। বিজেআরআই এ পাটের রিবনিং করার জন্য পরবর্তীকালে ১. ‘সিংগেল রোলার’, ২. ‘ডাবল রোলার রিবনার’ যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। কারিগরি দিক বিবেচনায় রিবনিংয়ের জন্য ‘ডাবল রোলার রিবনার’ অত্যন্ত সুবিধাজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে পুরো পাট গাছ না পচিয়ে কাঁচা গাছ থেকে ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে ছাল পচাতে হয়, ফলে পচানোর জন্য পানি কম লাগে, পচনের জায়গা ও সময় কম লাগে, বহন খরচ কম লাগে, আঁশে কোনো কাটিংস থাকে না এবং আঁশের মান অত্যন্ত ভালো হয়, ফলে আঁশের মূল্য বেশি পাওয়া যায়।
 

বাঁশের হুকের সাহায্যে ছাল ছাড়ানোর পদ্ধতি
প্রথমে ৫ ফুট বা প্রায় ১৫২ সেমি. লম্বা এক খণ্ড বোরাক বাঁশ নিয়ে একপ্রান্ত আড়াআড়িভাবে কাটতে হবে, যাতে বাঁশের প্রান্তটির দুইদিক ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো দেখায়। এটাকে বাঁশের হুক বলা হয়। এবার বাঁশ খ-টির অপর প্রান্ত আনুমানিক ১ হতে ১.৫ ফুট সুবিধা অনুযায়ী মাটির মধ্যে শক্ত করে পুঁতে দিতে হবে। পাশাপাশি ৩-৪ ফুট দূরে দূরে প্রয়োজনমতো এমন কয়েকটি বাঁশের হুক সারিবদ্ধভাবে মাটিতে বসাতে হবে। এখন ওই বাঁশের হুকগুলোর সঙ্গে একটি মুরুলি বাঁশ দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে আড়া বাঁধতে হবে যার ওপর পাট গাছ দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে। পাট গাছগুলো আড়ার ওপর দাঁড় করানোর পূর্র্বে যথা সম্ভব গাছের পাতা হাত দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে গাছির গোড়ার ৩-৪ ইঞ্চি (৮-১০ সেমি.) একটি শক্ত কাঠের/বাঁশের হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে নিতে হবে। এবার গাছের থেঁতলানো গোড়া বাঁশের হুকের মধ্যে রেখে ছালগুলোকে হাত দিয়ে হুকের দুইদিকে দুই ভাগ করে দুই হাতে নিজের দিকে সজোরে টান দিতে হবে। দেখা যাবে পাটের ছালগুলো সহজেই পাট খড়ি হতে আলাদা হয়ে গেছে এবং পাট খড়িগুলো সামনের দিকে চলে গেছে। এভাবে ৪-৫টি পাট গাছের ছাল একসঙ্গে বের করা সম্ভব। প্রাথমিকভাবে বোরাক বাঁশের যে কোনো প্রান্ত ধারালো দায়ের সাহায্যে কোনাকোনিভাবে কেটে বাঁশের হুক তৈরি করে পাট ছাল পৃথককরণ করা হলে এ ছালগুলোকে স্বল্প পানিতে বা পৃথক করা বাকলগুলাকে দুইভাবে পচানো যায়- ১. বড় মাটির চারিতে বাকল জাগ গোলাকার মোড়া বেঁধে সাজিয়ে রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে চারিটি ভরে দিতে হয়। একটি বড় চারিতে প্রায় ৩০ কেজি ছাল বা বাকল পচনো যায়। ২. যদি আশপাশে ছোট ডোবা বা পুকুর বা খাল কম গভীরতা সম্পন্ন জলাশয় থাকে তবে ছালগুলো গোলাকার মোড়া বেঁধে একটি লম্বা বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে পানির মধ্যে ডুবিয়ে পচানো যায়। এভাবে অল্প পানিতে খুব কম সময়ে পচন প্রক্রিয়াসম্পন্ন হয়। পচন সময় কমানের জন্য ১০০০ কেজি কাঁচা ছালে জন্য ১ সের বা প্রায় ১ কেজি ইউরিয়া সার পচন পানিতে মিশিয়ে দিয়ে অথবা একটি ছোট বালতি বা হাঁড়িতে দুই একটি পাট গাছ ছোট ছোট টুকরা করে আগেই পচিয়ে নিয়ে পরে ছাল পচানোর সময় ওই পানি মিশিয়ে দিতে হয়। বাঁশের হুকের পরিবর্তে সিংগেল-ডাবল রোলার রিবনারের সাহায্যে একই ভাবে পাটের রিবনিং করা যায়। পরে ছালগুলোকে পরিমাণ সাইজের গোলাকার মোড়া বাঁধতে হবে এবং পাট খড়িগুলো শুকিয়ে নিতে হবে। তবে ‘ডাবল রোলার রিবনারের’ সাহায্যে ছাল ছাড়ানো বেশি সুবিধাজনক।
 

দেশী পাটের বয়স ১০৫-১১০ দিন হলে পাট কাটতে হবে। তোষা পাটের বয়স ১০০-১০৫ দিন হলে পাট কাটতে হবে। পাট কাটার পরে পাতা ঝরায়ে পাট গাছের গোড়ার অংশে ৩-৪ ইঞ্চি পরিমাণ একটি কাঠ-বাঁশের হাতুড়ি বা মুগুর দিয়ে থেঁতলিয়ে নিতে হবে। থেঁতলানো কয়েকটি গাছ (৪-৫টি) রিবনারের ২ রোলারে মাঝখানে রেখে থেঁতলানো ছালগুলোকে ২ ভাগ করে রোলারেরর সামনের দিকে থেকে বাকিয়ে নিয়ে পেছনের দিক থেকে টান দিতে হবে। এত পাট কাঠি সামনের দিকে চলে যাবে এবং পাট গাছের ছালগুলো হাতে থেকে যাবে। ছালগুলোকে একত্রিত করে বান্ডিল/মোড়া বাঁধতে হবে যেন পাট ধোয়ার সময় সহজে খোলা যায়। বান্ডিল/মোড়াগুলোকে একত্রিত করে পূর্বে তৈরিকৃত গর্ত বা মাটির চাড়িতে জাগ দিতে হবে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রিবন পদ্ধতির গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১ একরে উৎপাদিত পাটের রিবন পচাতে ১৬,০০০ গ্যালনের মতো পানি প্রয়োজন হয়।
 

পাট ছালের মোড়া ভিজানোর জন্য গর্ত তৈরির পদ্ধতি
প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে উৎপাদিত পাট ছালের পরিমাণ প্রায় ৩০০০-৩৫০০ কেজি। প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত পাটের ছাল পচানোর জন্য ৬ মি.২মি.১মি.-দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা মাপের ১টি গর্ত করতে হবে। গর্তটির নিচে ও চারিপাশে ১টি পলিথিন কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে, যেন পানি চলে না য়ায়। এ গর্তটিতে খাল বা বিলের ৮০০০-৮৫০০ লিটার পানি দিয়ে ভরে দিতে হবে। পাট ছালে বান্ডিল-মোড়াগুলো গর্তের পানিতে ডুবিয়ে জাগ দিতে হবে। কচুরিপানা বা খড় বা চট দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে, যেন রৌদ্র ছালগুলো শুকিয়ে না যায়। প্রতি বিঘার পাট ছালের (৩০০০-৩৫০০ কেজি) জন্য ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু বাছ পাট নিয়ে মাটির চাড়ি বা গামলায় পানিতে পচিয়ে, সেই পচা পানি তৈরি করা গর্তে দেয়া যেতে পারে। জাগ সম্পন্ন হলে আঁশগুলো পরিষ্কার পানিতে বা মাটির চাড়িতে ধুয়ে বাঁশের আড়ায় ভালোভাবে শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে। প্রতি কেজি ছালের জন্য ২.৫০-৩.৩০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি দেয়া যেতে পারে।
 

এ প্রযুক্তি শুধুমাত্র যে এলাকায় পাট পচনের পানির অভাব রয়েছে সেই এলাকার জন্য প্রযোজ্য। পানির অভাবজনিত কারণে পাট পচনের জন্য বহু দূরে পাট গাছ বহনের চেয়ে জমির আইলের পাশে গর্ত করে এ পদ্ধতিতে পাট পচানো লাভজনক। পাট কাটার সঙ্গে সঙ্গে ‘ছালকরণ’ করতে হবে। রৌদ্রে পাট গাছ শুকিয়ে গেলে ‘ছালকরণ’ সমস্যা হবে। সম্ভব হলে মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে এ কাজ করতে হবে। পাট কাটার ১২-১৫ দিন পূর্বে গর্ত করে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা যেতে পারে। গর্তের চারপাশে মাটি দিয়ে উঁচু করতে হবে যাতে বাহিরের ময়লা পানি যেন গর্তে প্রবেশ না করে। অতি বৃষ্টিতে গর্তের পানি যাতে উপচে না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
 


আঁশ ছাড়ানো ও পরিষ্কারকরণঃ পচন শেষ হলে পাট গাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানো যায়ঃ


ক) শুকনা জায়গায় বসে একটা একটা করে আঁশ পৃথক করে পরে কয়েকটি গাছের আঁশ একত্রে ধৌত করা যায়। এই পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ালে আঁশের মান ভালো হয় এবং প্রতিটি পাট কাঠি আস্ত থাকে।


খ) হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে পঁচানো আঁটি থেকে কয়েকটি গাছের গোড়া বের করে একটা কাঠের মুগুড় দ্বারা পিটানোর পর গোড়ার দিক থেকে প্রায় ২০ ইঞ্চি পরিমাণ দূরে ভেংগে কয়েকটি ঝাঁকি দিলেই  ভাংগা অংশ থেকে পাট কাঠি আলাদা হয়ে যায়। এরপর পৃথক হওয়া আঁশটুকু হাতে জড়িয়ে বাকি অংশ পানিতে সমান্তরাল রেখে ৪-৫ বার সম্মুখ-পিছনে ঝাকি দিলেই আঁশ পৃথক হয়ে আসে। লক্ষ্য রাখতে হবে, যে প্রকারেই আঁশ ছাড়ানো হোক না কেন, আঁশ ছাড়ানোর সময় গাছের গোড়ার অংশের পঁচা ছাল দিয়ে ঘষে মুছে ফেলতে হবে এবং আঁশ ছাড়ানোর পর প্রত্যেকটি গাছের আঁশের গোড়া সমান করে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।


আঁশ শুকনো বাঁশের আড়ায় ঝুলিয়ে আঁশ শুকানো উচিত। আঁশ কখনো মাটিতে বিছিয়ে শুকানো উচিত নয়। শুকানোর পর আঁশ একত্রে বেঁধে গুছিয়ে গুদামে বিক্রির জন্য রাখা হয়। ভিজা অবস্থায় আঁশ কখনো গুদামে রাখা উচিত নয়।


Recent Posts

ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট(BLB)

Apr 17, 2024
ফসলের রোগ-বালাই