পাটের বিভিন্ন রোগ তার প্রতিকার

May 22, 2023
কৃষি সম্পর্কিত
পাটের বিভিন্ন রোগ তার প্রতিকার

পাটের বিভিন্ন রোগ তার প্রতিকার


১।রোগের নামঃ

পাটের পাতার মোজাইক ভাইরাস Jute Leaf Mosaic Virus (Chlorosis), ভাইরাসজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • এই রোগ বীজবাহিত।

  • পাতার উপর হ লুদ-সবুজ রঙের ছোপ ছোপ দাগ পড়ে।

  • আক্রান্ত গাছ খাটো হয়।

  • সাদা মাছি পোকা এ রোগ ছড়ায়।

  •  আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে যায় ও ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং সামান্য ফ্যাকাশে হয়ে যায়।


সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।

  • আক্রান্ত দেখা মাত্র তুলে নষ্ট করা।

  •  আশপাশের আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করা।

  • ডায়াজিনন ৬০ ইসি ২ মি.লি/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭-৮ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করে বাহক পোকা(সাদা মাছি) দমন করা।

  • সাদা মাছি দমন করা যেমন সবিক্রণ- ২ মিলিবা টিডো বা এডমায়ার- ০.৫ মিলি, ইমিটাফ- ০.২৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

 


২।রোগের নামঃ

পাটের গোড়া পঁচা রোগ Foot Rot or Soft Rot of Jute (Sclerotium rolfsii), ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • যে সব দেশী পাটের ক্ষেতে পানি নিষ্কাশন করা যায় না, সে সব ক্ষেতের পাট গাছের গোড়ায় সাদা তুলার আঁশের মত এক প্রকার ছত্রাক রাতারাতি বেড়ে উঠে।

  • কয়েকদিন পর সরিষার দানার মত বাদামী রংয়ের জীবাণুর দানা দেখা যায়।

  • এ রোগের ফলে গাছের গোড়া পঁচে যায় এবং গাছ ভেঙ্গে পড়ে।

  • জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়।

  • জমিতে এ রোগ দেখা দিলে গাছ কেটে আঁশ সংগ্রহ করা উচিত। দেশী ও তোষা উভয় পাটেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

  • পাট কাটার পর গাছের গোড়া, শিকড় ও অন্যান্য পরিত্যাক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • ক্ষেতের আশ-পাশ অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না

  • এ রোগের প্রতিকারের জন্য জমি পরিষ্কার পরিছন্ন এবং আর্বজনামুক্ত রাখতে হবে।

  • পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।

  • বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধনের জন্য ভিটাভেক্স ২০০ (০.৪%)/প্রোভেক্স-২০০ (০.৪%) এর ব্যবহারে যথেষ্ট সুফল দেয়। পাটের প্রধান ছত্রাকজনিত রোগগুলো বীজ ও মাটি বাহী। বপনের আগে বীজ শোধনের ফলে রোগের প্রকোপ অনেক কমে যায়। শোধন করা সম্ভব না হলে বপনের আগে বীজ রোদে ভালভাবে শুকাতে হবে।

  • ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে গাছের গোড়ায় পর পর দুদিন প্রয়োগ করলে রোগের ব্যাপকতা কমে যায়।


৩।রোগের নামঃ

পাটের শুকানো ক্ষত রোগ Anthracnose of Jute (Colletotrichum corchori), ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • কান্ডে কালচে দাগ পড়ে।

  • ক্রমেই এ দাগ ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রান্ত স্থান ফেটে যায়।

  • কখনও কখনও আক্রান্ত স্থানের আঁশ ছোবড়ের মত বের হয়ে আসে।

  • পাট পঁচানোর পর আক্রান্ত স্থান শক্ত থাকে।

  • আক্রান্ত গাছের আঁশ নিম্নমানের হয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত গাছ তুলে তা পুড়ে নষ্ট করা।

  • পাট কাটার পর ফসলের অন্যান্য অংশ সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলা।

  • সুস্থ ও রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।

  • সুষম রাসায়নিক সার ব্যবহার করা।

  • বীজ শোধন করা- ২ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন বা ভিটাভেক্স ২.৫ গ্রাম/কেজি বীজ।

  • আক্রমণ বেশী হলে ব্যাভিষ্টিন-১ গ্রাম, একরোবেট- ২ গ্রাম, টিল্ট ০.৫ মিলি বা কুপ্রাভিট- ৪ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।


৪।রোগের নামঃ

  পাটের ঢলে পড়া রোগ Wilting of Jute (Rhizoctonia solani), ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • এ রোগের আক্রমণে সম্পূর্ণ গাছ ক্রমেই ঢলে পড়ে।

  • গাছের গোড়ায় বাদামী রঙের দাগ পড়ে।

  • ফুল আসার সময় তোষা পাট প্রায়ই এ রোগে মারা যায়।

  • দেশী পাটে এ রোগ কম দেখা যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত দেখা মাত্র তুলে পুড়ে ফেলা।

  • জমিতে পানি জমতে না দেয়া।

  • রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।

  • সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা। (বিশেষ করে পটাশ সার দেয়া)।

  • বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করা, ভিটাফ্লো বা প্রোভেক্স বা ভিটাটেক্স- ৩ গ্রাম বা ব্যাভিষ্টিন- ২ গ্রাম/ কেজি বীজ।

  • আক্রমণ বেশী হলে কুপ্রাভিট ৪ গ্রাম বা ডাইথেন এম- ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করা।

৫।রোগের নামঃ

পাটের আগা শুকানো রোগ Die Back Disease of Jute (Glomerella singulata), ছত্রাকজনিত রোগ।

লক্ষণঃ

  • পাট গাছ আগা থেকে নিচের দিকে শুকাতে থাকে।

  • ঝড় বা কোন কারণে গাছে ক্ষত সৃষ্টি হলে রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়।

  • সাধারণত তোষাপাটে এ রোগ বেশী দেখা যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত গাছ শিকড়সহ তুলে নষ্ট করা।

  • সুস্থ ও রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।

  • সুষম রাসায়নিক সার ব্যবহার করা।

  • বীজ বপনে পূর্বে বীজ শোধন করা (প্রোভেক্স বা ভিটাভেক্স- ২গ্রাম, ব্যাভিষ্টিন- ২ গ্রাম/প্রতি কেজি বীজ)

  • আক্রান্ত ক্ষেতে কুপ্রাভিট- ৪ গ্রাম বা ডাইথেন এম- ৪৫ – ২.৫ গ্রাম/লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করা।