ছাদের টবে তরমুজ চাষের পদ্ধতি
তরমুজ একটি সুস্বাদু এবং গরমের সময় অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক ও তৃষ্ণা নিবারক একটি ফল। আমাদের দেশে যেসব উন্নতমানের তরমুজ পাওয়া যায় তা দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত সংকর জাতের বীজ থেকে চাষ করা হয়ে থাকে।তরমুজে প্রায় ৯৬ ভাগই পানি এবং প্রচুর খনিজ লবণ থাকায় দেহে লবণ ও পানির ঘাটতি পূরণ করে। আসুন, আমরা জেনে নেই কীভাবে এই উপকারী ফলটি চাষ করতে হয়।
চাষের জন্য টব বা প্লাস্টিক অথবা কাঠের কনটেইনারও ব্যবহার করা যায়। মাঝারি সাইজের একটি টব বেছে নিন। প্লাস্টিকের বালতিতেও করতে পারেন।
মাঝারি আকৃতির টবে ৪টি গাছের চাষ করা সম্ভব। মূলত টবের মধ্যে গাছ থাকবে, কিন্তু তরমুজ টবের পাশের ফ্লোরে বিছানো অবস্থায় থাকবে।
তরমুজের জাতঃ তরমুজের আধুনিক জাতসমূহের মধ্যে টপইল্ড, গ্লোরী, সুগার বেবি, বেবি তরমুজ (বারোমাসি ), ( ভিক্টর সুপার F1, ওসেন সুগার F1, ব্লাক জায়ান্ট F1,বঙ্গ লিংক F1,গ্রীন ড্রাগন ইত্যাদি) জাতগুলো নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বপন করা যাবে। এছাড়াও ( সুপার এম্পেরর, ট্রপিক্যাল ড্রাগন,আনারকলি, চ্যাম্পিয়ন, ব্ল্যাক ডায়মণ্ড, ব্যাক সান) এগুলো ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়।
জলবাযু ও মাটিঃ শুষ্ক,উষ্ণ ও প্রচুর সুয্যের আলো পায় এমন স্থানে তরমুজ ভালো হয়ে থাকে। তবে অধিক আর্দ্রতা তরমুজ চাষের জন্য ক্ষতিকর। খরা ও উষ্ণ তাপমাত্রা সহনশীলতা তরমুজের অনেক বেশি। উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য উত্তম।
বীজ প্রস্তুত
শীতকালে খুব ঠান্ডা থাকলে বীজ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত পানিতে ভিজিয়ে রেখে মাটির পাত্রে রক্ষিত বালির ভেতরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরোদ্গম হয়। বীজের অঙ্কুরোদ্গম দেখা দিলেই ওই বীজ বীজতলায় স্থানান্তরিত করা উচিত।
বীজ রোপণ
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় হলো তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। বীজ রোপণের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম। শীতের শেষে মধ্য ফেব্রুয়ারি বীজ বপন করা যায়।
যত্ন
বিশেষ করে প্লাস্টিকে কন্টেইনার ব্যবহার করলে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়া জন্য আগেই কন্টেইনারটিতে কয়েকটি ছোট ছিদ্র করে নিতে পারেন।বীজ বপনের পর অঙ্কুরোদ্গমের জন্য একটি হালকা পানি দেয়া দরকার এবং পরবর্তী সময়ে পানির অভাব হলে ৮-১০ দিন পরপর অবস্থা বুঝে পানি দিতে হবে। শুকনো মৌসুমে সেচ দেয়া খুবই প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যাতে পানি লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ফুল উৎপাদন ও ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আদ্রতা থাকতে হবে। তরমুজের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অঙ্গজ বৃদ্ধি পর্যায়, ফুল উৎপাদন ও ফল বড় হওয়ার সময় অবশ্যই পানি দিতে হবে। এ সময় আদ্রতার অভাব হলে ফলন ও ফলের গুণগত মান বিনষ্ট হতে পারে।প্রত্যেকটি গাছে চারটি শাখা রেখে বাকিগুলো কেটে দিতে হবে। গাছের শাখার মাঝখানের গিটে যে ফল হয় সেটি রাখতে হয়। চারটি শাখায় চারটি ফলই যথেষ্ট। সকাল বেলা স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ফুলকে পুরুষ ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফলন ভালো হয়।
ফসল তোলা
জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে তরমুজ পাকে। সাধারণত ফল পাকতে বীজ বোনার পর থেকে ৮০-১১০ দিন সময় লাগে। তরমুজের ফল পাকার সঠিক সময় নির্নয় করা একটু কঠিন। কারণ অধিকাংশ ফলে পাকার সময় কোনো বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায় না। তবে নীচের লক্ষণগুলো দেখে তরমুজ পাকা কি না তা অনেকটা অনুমান করা যায়। ফলের বোঁটার সঙ্গে যে আকর্শি থাকে তা শুকিয়ে বাদামি রং হয়।খোসার উপরে সূক্ষ লোমগুলো মরে পড়ে গিয়ে তরমুজের খোসা চকচকে হয়।তরমুজের যে অংশটি মাটির ওপর লেগে থাকে তা সবুজ থেকে উজ্জল হলুদ রংঙের হয়ে ওঠে।তরমুজের শাঁস লাল টকটকে হয়।আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে যদি ড্যাব ড্যাব শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে যে ফল পরিপক্কতা লাভ করেছে। অপরিপক্ব ফলের বেলায় শব্দ হবে অনেকটা ধাতবীয়।