পাটের জমি তৈরিকরণ


May 21, 2023
কৃষি সম্পর্কিত
পাটের জমি তৈরিকরণ

 

পাটের জমি তৈরিকরণ


উঁচু ও মধ্যম উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি বেশি সময় দাঁড়ায় না এবং দো-আঁশ মাটি পাট চাষের জন্য বেশি উপযোগী। বৃষ্টিপাতের পরপরই আড়াআড়ি ৫-৭ টি চাষ দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। ঢেলা গুড়ো করতে হবে এবং জমি আগাছামুক্ত করতে হবে। চাষের জন্য বিভিন্ন রকম অত্যাদধুনিক পাওয়ার টিলার, মিনি টিলার রয়েছে যা শ্রম, সময় ও অর্থ সাশ্রয় করে। 



সার ব্যবস্থাপনা : 

সারের সঠিক মাত্রা নির্ধারণের জন্য মাটির উর্বরতা শক্তি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে জমিতে কোন সার কতটুকু প্রয়োজন তা সঠিকভাবে জানা যায়। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, পাটের জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করলে সাধারণ ফলনের চেয়ে একরপ্রতি ১০.৫ মণ বা বিঘাপ্রতি ৩.৫ মণ বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।


পাট ফসলে ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে এবং অন্যান্য সার এক কিস্তিতে জমি তৈরির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। জমিতে গোবর সার ব্যবহার না করলে দেশি পাটে শেষ চাষের সময় একরপ্রতি ৩৩ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি এমওপি, ১৮ কেজি জিপসাম এবং ৪.৫ কেজি জিংক সালফেট ভালোভাবে জমিতে মিশিয়ে বীজ বপন করতে হবে। একইভাবে তোষা পাটে একরপ্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া, ২১ কেজি টিএসপি, ২৪ কেজি এমওপি, ৩৮ কেজি জিপসাম এবং ৪.৫ কেজি জিংক সালফেট প্রয়োগ করে জমি তৈরি করতে হবে। পাট ফসলের বয়স ৪০-৪৫ দিন পর ২য় কিস্তির ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। উপরিপ্রয়োগের সময় লক্ষ রাখতে হয় যেন মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকে। ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগের আগে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার ও মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। উপরিপ্রয়োগকৃত ইউরিয়া যেন গাছের কচিপাতা বা ডগায় লেগে না থাকে সেজন্য সার ছিটানোর পর পাট কাঠি অথবা অন্য কিছু দিয়ে পাতায় বা ডগায় লেগে থাকা সার সরিয়ে দিতে হবে।  উল্লেখ্য, প্রখর রৌদ্র বা বৃষ্টির সময় ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ না করাই ভালো।


জমিতে গোবর সার/ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগ করলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ আগে গোবর সার প্রয়োগ করে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রতি একর জমিতে ৪৫-৬০ মণ গোবর সার ব্যবহার করলে দেশি পাটে শেষ চাষের সময় একরপ্রতি শুধু ১২ কেজি ইউরিয়া এবং তোষা পাটে ১৮ কেজি ইউরিয়া, ৪.৫ কেজি এমওপি, ২০ কেজি জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও গাছের বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে ২য় কিস্তিতে ইউরিয়া দেশি পাটে একরপ্রতি ৩৩ কেজি এবং তোষা পাটে ৪০ কেজি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।



আগাছা ব্যবস্থাপনা : 

আগাছা যেকোনো ফসলের চরম শত্রু। আগাছা পাট ফসলের খাদ্যে ভাগ বসায়, সেজন্য ইহা মাটি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য উপাদান গ্রহণ করতে পারে না। ফলে ফসলের বৃদ্ধি দারুণভাবে ব্যাহত হয় এবং ফলন কমে যায়। বাংলাদেশের এলাকাভেদে প্রায় ১৩০ প্রজাতির আগাছা জন্মাতে দেখা যায়। এদের মধ্যে ২৭টি প্রজাতি আগাছা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ৭টি প্রজাতি পাট ফসলের বেশি ক্ষতি করে। এজন্য পাট ফসল বপনের আগেই জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে সময়মতো দমনের ব্যবস্থা করতে হবে। সময়মতো আগাছা দমন না করা হলে নিড়ির খরচ অনেক বেড়ে যায়। পাটের আবাদে যে খরচ হয় তার একটি বড় অংশই নিড়ানির জন্য হয়ে থাকে। শস্য বিন্যাসে পরিবর্তন করেও আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন আলুর জমিতে পাট চাষ করলে নিড়ানির খরচ অনেক কমে যায়। পাট ফসল বপনের ৩০ দিনের মধ্যে চারা কিছুটা পাতলা করে ১ম নিড়ানির দিতে পারলে আগাছার প্রকোপ অনেক কম হয় এবং গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। তবে ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে অবশ্যই প্রথম নিড়ানির কাজ শেষ করতে হবে। পরবর্তীতে আগাছার  মাত্রা বুঝে ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ২য় নিড়ানির দিতে হবে। মোট কথা পাট ফসলে সময়মতো  আগাছা দমন করা খুবই গুরুত্বর্পূণ। বর্তমান নিড়ানির কাজকে সহজ করে দিতে বাজারে নানা রকম যন্ত্র চালিত নিড়ানি দেখতে পাওয়া যায় যেমনঃ  মিনিটিলার, পাওয়ার উইডার, ব্রাশ কাটার ইত্যাদি। এসব মেশিন নিড়ানির কাজকে সহজ করে দিয়েছে।


পানি ব্যবস্থাপনা :  

বৃষ্টি না হলে জমিতে জোঁ অবস্থা আনার জন্য অনেক সময় হালকা সেচের  প্রয়োজন হয়। পাট বৃষ্টিনির্ভর ফসল হওয়ায় পরবর্তীতে আর সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নালা কেটে জমিতে জমা পানি বের করে দিতে হবে। কেননা পাট ফসল দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া পাটের জমিতে অতিরিক্ত রস থাকলে আগাছার প্রকোপ বেড়ে যায়, ফলে নিড়ানির খরচ বেশি হয়। আবার প্রচ- খরা দেখা দিলে জমিতে হালকাভাবে সেচ দেয়া প্রয়োজন।  জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে প্রয়োগকৃত সার পাটগাছ ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারে না। ফলে ফসলের  বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সেচের পর জোঁ অবস্থা বুঝে নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হয়। এতে জমিতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত রস জমা থাকে এবং পাট গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। বিভিন্ন ধরনের সেচ পাম্প পানি ব্যবস্থাপনার কাজকে সহজ করে দিয়েছে।






Recent Posts

ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট(BLB)

Apr 17, 2024
ফসলের রোগ-বালাই