কলকে ফুল
ভাঁট বা ঘেটু গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম Clerondendron viscosum। এটি গ্রামবাংলার অতি পরিচিত একটি বুনো উদ্ভিদ।
ভাঁট গাছের প্রধান কাণ্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশেল আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি ফুল ফোটে। এই ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। ফুল ফোটার পর মৌমাছিরা ভাঁট ফুলের মধু সংগ্রহ করে। গ্রামের মেঠো পথের ধারে, পতিত জমির কাছে এরা জন্মে থাকে এবং কোনরূপ যত্ন ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। এছাড়াও পাহাড়ি বনের চূড়ায় এবং পাহাড়ি ছড়ার পাশে এদের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষনীয়
ভাঁট গাছ ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর পাতার রস শিশুর জ্বর দূর করে। এছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বীরা ভাঁট ফুল দিয়ে ভাঁটি পূজার আয়োজন করে থাকে।
ইঞ্চি লতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Tradescantia zebrina), আগের বৈজ্ঞানিক নাম:Zebrina pendula, হচ্ছে কমেলিনাসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা এবং কলম্বোর স্থানীয় প্রজাতি এবং এখন এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে।
ইঞ্চি লতাতে লাল রঙের তিন পাপড়ির ফুল হয়। ইঞ্চি গাছ ঝুলানো টবে রাখা মন্দ নয়, এতে এর পাতার নিচের দিকের সুন্দর মেরুন রঙ দৃষ্টিগোচর হয়। বীজ ছাড়া মাত্র এক ইঞ্চি কাণ্ড থেকেও এর বিস্তার ঘটতে পারে। এর কান্ড এবং পাতার স্বচ্ছ কষ বেশ এলার্জিক, তাই গ্লাভস্ ছাড়া নাড়াচাড়া করলে হাত ধুয়ে ফেলা ভাল।
ব্যবহারঃ
ইঞ্চিলতা মূলত আলংকারিক বাসাবাড়ির উদ্ভিদ। এদেরকে ভূমির আচ্ছাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এদেরকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আগ্রাসি হয়ে ওঠে। এদের কান্ড এবং পাতার স্বচ্ছ কষ বেশ এলারজী সৃষ্টিকারী। এটি দক্ষিণ আফ্রিকা এবং গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে আগ্রাসি হিসেবে বিবেচিত।
উদয়পদ্ম বা হিমচাঁপা (ইংরেজি: Laural magnolia, Magnolia, Southern magnolia) একটি ফুলের নাম, এর বৈজ্ঞানিক নাম: Magnolia grandiflora) হচ্ছে Magnoliaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ।এই বৃক্ষ অত্যন্ত দীর্ঘকায়, ২৭ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। কালচে বা গাঢ় সবুজ উপবৃত্তাকার পাতা রঙ। দেখতে ৫ থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে । অনেকটা কাঁঠাল পাতার মতো।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের জাতীয় ফুল এটি। সেখানে প্রায় প্রতিটি রাস্তা বা বাড়ির সামনে এই ফুলের গাছ আছে।
বংশ বিস্তার ও চাষাবারঃ
উদয় ফুল ও ফল ধারণ করে এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে। বসন্তের শেষভাগ ছোট ডালের মাথায় কলি ধরতে শুরু করে। হিমচাপার ফল ডিম্বাকার। কিছুটা গোলাপি রঙের, ৮ থেকে ১০ সেমি লম্বা। ফল বীজে পরিপূর্ণ। হিমচাপার বৈজ্ঞানিক নামের দ্বিতীয়াংশের উৎপত্তি ল্যাটিন Grandis থেকে যার অর্থ বড় আর flora মানে ফ্লাওয়ার বা ফুল। ফুলের আকারের জন্য এমন নাম হতে পারে। দাবাকলম ও শাখা কলমের সাহায্যে এর বংশ বিস্তার ঘটে থাকে। বীজ পাখিদের প্রিয়, পাখি ও অন্যান্য প্রাণির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। লবণাক্ত মাটি, বায়ুপূর্ণ সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাতেও এটি ভালো হয়।
ফুলের নামঃ উলট চন্ডাল
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম দিয়েছেন অগ্নিশিখা।
অন্যান্য স্থানীয় নামঃ Flame lily; glory lily, Kari hari,
Gloriosa lily
বৈজ্ঞানিক নামঃ Gloriosa superba পরিবারঃ Liliaceae (Lily family) এই ফুলটি একেবারে সংক্ষিপ্ত সময়ের অতিথি হয়ে আসে আমাদের প্রকৃতিতে।ফুলের পাঁপড়ির গোড়ার দিক হলুদ আর আগার দিক গাঢ় লাল রঙের হয়।
উলট চন্ডাল বা গ্লোরিওসা সুপাবা হল কলচিকেসিয়ে পরিবারের সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি। ইংরেজি ভাষায় এর প্রচলিত নামসমূহ হলঃ ফ্রেইম লিলি (শিখা লিলি), ক্লাইমবিং লিলি (পর্বতারোহন লিলি), ক্রিপিং লিলি (প্রলম্বন লিলি), গ্লোরি লিলি (মহিমা লিলি), গ্লোরিওসা লিলি (গৌরবময় লিলি), টাইগার ক্লাও (টাইগার নখর) এবং ফায়ার লিলি (অগ্নি লিলি)। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অগ্নিশিখা নামটির প্রবর্তক। এটি এক ধরনের লতাগাছ, যা পাতার ডগাস্থিত আকর্ষির সাহায্যে বেয়ে ওঠে। ফুলের পাপড়ির গোড়ার দিক হলুদ আর আগার দিক গাঢ় লাল রঙের হয়। এই ফুলের গাছ ৬ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হইতে পারে। ছায়াঘেরা অথবা যেখানে সব সময় সূর্যালোক থাকে দুই জায়গায় হয়। লাল এবং উজ্জ্বল হলুদ এই দুই রং এ দেখা যায়। এই গাছের সমন্ত অংশ বিষাক্ত।
করবী একটি লাল গোলাপী বা সাদা ফুলবিশিষ্ট চিরহরিৎ গুল্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Nerium oleander বা Nerium indicum, ইংরাজী নাম: Oleander, অন্যান্য নাম Adelfa, Alheli Extranjero, Baladre, Espirradeira, Flor de Sao Jose, Laurel de jardin, Laurel rosa, Laurier rose, Flourier rose, Olean, Aiwa, Rosa Francesca, Rosa Laurel, and Rose-bay। গোলাপী রঙের করবী ফুলকে রক্তকরবী বলা হয়।
সাহিত্যে রক্তকরবী, শ্বেতকরবী ইত্যাদি বিখ্যাত। সুন্দর দেখতে ও অত্যন্ত রুক্ষ পরিবেশে বাড়তে পারে বলে বহু জায়গায় সাজবার জন্য এটি চাষ করা হয়। কিন্তু গাছটির সর্বঙ্গ তীব্র বিষযুক্ত। একটি মাত্র পাতা খেলেই মানুষের, বিশেষত শিশুর মৃত্যু হতে পারে। পাতা তেতো বলে মানুষের ক্ষেত্রে বিষক্রিয়া কম দেখা যায়, অবশ্য TESS (Toxic Exposure Surveillance System) অনুসারে ২০০২ সালে আমেরিকায় ৮৪৭টি বিষক্রিয়ার ঘটনা লক্ষিত হয়। ঘাসে মেশা শুকনো করবী পাতা বা শাখা খেয়ে গবাদি পশুতে (বিশেষত ঘোড়ার) বিষক্রিয়া/মৃত্যু দেখা যায়- পূর্ণবয়স্ক ঘোড়ার মারাত্মক মাত্রা ১০০g, (০.৫ mg/Kg)।
করবী ভূমধ্যসাগরীয় ও এশীয় প্রজাতি। এরা ২-২.৫ মিটার উঁচু। এরা চিরসবুজ গাছ। গোড়া থেকে অনেকগুলো ডাল ঝোপের মত গজায়। পাতা ডালের আগার দিকে বেশি। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় ফুল। কলমে চাষ, ছাঁটা নিষ্প্রয়োজন। এদের বীজ বিষাক্ত।
জলবায়ু:
করবী গাছের চাষের জন্য খুব বেশী নয় এমন আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি যাতে বেশী ভিজে কাদা কাদা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনো কারণে মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে সেই কয়দিন জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। হাল্কা ছায়া করবীর জন্য উপযোগী। মাটি শুকনো হলে ভাল।
টব:
করবী ফুল চাষের জন্য বড় উচ্চতার টব হলে ভাল হয়।
সার মাটি:
ভাল বৃদ্ধির জন্য ভারী দোঁয়াশ মাটি হলে ভাল হয়। আপনি যদি টবে করবী ফুল গাছ চাষ করতে চান তাহলে প্রথমেই যেটি করবেন, পরিমান মতো দো-আঁশ বা বেলে মাটি, এর সাথে পরিমান মতো ব্যালিমিন, কম্পোস্ট, একমুঠো হাঁড়ের গুঁড়ো, দু’মুঠো ছাই মিশিয়ে নিন। এতে টবের মাটি ভাল থাকবে। এর সঙ্গে কিছুটা পরিমান পাতা পচা সার, গোবর, খৈল মিশিয়ে মাটি তৈরি করলে ভাল হয়।
সার:
গোবর সার, চাপান সার এই গাছের জন্য ভাল। নিমের গুড়ো খোল, কাঠের ভষ্ম, গুঁড়ো হাড়, ও গোবর সার মিশিয়ে তৈরী করুণ চাপান সার। বর্ষাকালে সার দিতে হবে।
পরিচর্যা:
ডাল ও শিকর ছাঁটাই: একটি সতেজ গাছ তৈরির প্রক্রিয়াটি হল গাছটি বড় হলে ডালের অনেকটা ছেটে দিতে হবে। শীতের শেষে ডাল ছাঁটাই করতে হয়। ছাঁটাই এর পরে চাউবান্টিয়া পেন্ট ব্যবহার করুন। আর শিকরের ক্ষেত্রে এক বছর অন্তর ছাঁটতে হয়। এর জন্য টব থেকে মাটি সমেত গাছ বের করে শিকড় ছেঁটে কাটা জায়গায় বোর্দোপেস্ট লাগিয়ে আবার মাটি সমেত গাছ টবে ঢুকিয়ে দিতে হবে।এই গাছে সাধারণত প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। তবে বেশি ফোটে বসন্ত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে। সার হিসেবে চাপান সার বা গোবরসার দিতে হবে। করবী গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোড়ায় জল না জমে। মাসে দুবার মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। করবী ফুল গাছে রোগ বা পোকার আক্রমণ খুব কম ও বেশি পরিচর্যাও করা লাগে না।
বেলি বা বেলী (ইংরেজি: Arabian jasmine), (বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminum sambac) জেসমিন গণের এক প্রকারের সুগন্ধী সাদা ফুল। এই প্রজাতির গাছের উচ্চতা এক মিটার হতে পারে। এদের কচি ডাল রোমশ। পাতা একক, ডিম্বাকার, ৪-৮ সেমি লম্বা হয়। পাতা গাঢ়-সবুজ এবং মসৃণ। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় একটি থোকায় কয়েকটি ফুল ফোটে। ফুলের আকার ও গড়ন অনুসারে কয়েকটি জাত আছে। কলম ও শিকড় থেকে গজান চারায় চাষ করা যায়। শীতকালে ছেঁটে দেয়া লাগে এবং টবেও ভালোভাবে জন্মান যায়। এই গাছের পাতা, ফুল ও মূল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উপকারিতাঃ
১। বেলির মূল এবং কচি পাতা থেঁতো করে সিদ্ধ করে সেবন করলে বুকে সর্দি বসলে ভালো হয়ে যায়।
২। বেলি ফুল চূর্ণ করে গরম পানির সাথে সেবন করলে কৃমি ভালো হয়।
৩। বেলির মূল সিদ্ধ করে এই ক্বাথ সেবন করলে শ্বাসকষ্টে উপকার পাওয়া যায়।
৪। বেলির মূল থেঁতো করে এই রস আতপ চাল ধোয়া পানি ও চিনি মিশিয়ে খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়।
৫। বেলির পাতা বেটে ক্ষতের উপর প্রলেপ দিলে ক্ষত দ্রুত ভালো হয়।
৬। প্রসাব রোধ হলে বেলির পাতা বেটে পানিসহ সেবন করলে প্রসাবের বেগ আসবে।
৭। যাদের রাতে ঘুম হয় না, তারা বেলির পাতা বেটে পানিতে গুলিয়ে সেবন করলে ঘুম ভালো হয়।
শিরীষ( Lebbeck, Lebbek Tree, Flea Tree) এটি একটি ছায়াতরু গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Albizia lebbeck এবং সংস্কৃত নাম শিরীষ। দেশের প্রায় সব ধরনের শিরীষ সাধারণত কড়ই গাছ নামে পরিচিত। গড়ন ও আভিজাত্যের দিক থেকে বৃষ্টি শিরীষ এবং গগন শিরীষ দুটোই অনন্য। কিন্তু এরা এদেশের আত্মজ নয়। বরং আলোচ্য শিরীষটি এ অঞ্চলের আদিবৃক্ষ। শিরীষ ফুলের সৌন্দর্য সম্পর্কে এদেশীয় কবিকুলের সচেতনতা সুপ্রাচীন। কালিদাস শিরীষকে চারুকর্ণের অলঙ্কার বলে মেঘদূতে উল্লেখ করেছেন। বৈষ্ণব কবি রাধামোহনের কাছে শিরীষ কোমলতার প্রতীক। চৈত্রের শেষে বৃষ্টিস্নাত ধরিত্রীর স্নেহস্পর্শ ব্যতিরেকে এদেশে শিরীষ প্রস্ফুটিত হয় না।
পরিণত শিরীষ বিশাল বৃক্ষ। কাণ্ড সরল, উন্নত, গোলাকৃতি, দীর্ঘ, পাঁশুটে কিংবা সাদা এবং প্রায় মসৃণ। শীর্ষ ছত্রাকৃতি এবং সঘন পত্রবিন্যাসে ছায়ানিবিড়। পাতা দ্বিপক্ষল এবং আলোসংবেদী, তাই সন্ধ্যায় বুজে যায়। বসন্তের শেষে পাতা গজানো ও ফুল ফোটার সময়। কচি পাতা পাণ্ডর সবুজ। শিরীষ মঞ্জরির আকৃতি রেইনট্রির অনুরূপ হলেও আয়তনে বড়, রঙেও আলাদা। ফুলের সৌন্দর্যটুকু বিকীর্ণ পরাগ-কেশরেই নিহিত এবং তার কমলতা পালকের সঙ্গে তুলনীয়। শিরীষ-মঞ্জরি হালকা হলুদ এবং পরাগকেশরের আগা সবুজ। ফুলের গন্ধ দূরবাহী এবং উগ্র। শিরীষ কাঠ দৃঢ়, দীর্ঘস্থায়ী। শিকড় অরেচক, ছাল চর্মরোগের ওষুধ এবং পাতা রস রাতকানারোগে উপকারী। শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালয় এবং চীনেও গাছটি জন্মে। ইদানীং আফ্রিকা ও আমেরিকায় চাষ হচ্ছে। শিরীষ ফুল সৌন্দর্যে, সুগন্ধে যেমন আকর্ষণীয়, কাব্যসাহিত্যে বহু উল্লেখে সে আমাদের নান্দনিক চেতনারও অঙ্গীভূত। এই গাছের ছাল, মূল,পাতা, ফুল, বীজ ও কাঠের সারাংশ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উপকারিতা:
১। শিরীষ বীজ চূর্ণ ও মিছরি চূর্ণ করে গরম দুধসহ সেবন করলে শুক্রতারল্য দূর হয়।
২। শিরীষ গাছের মূলের ছাল চূর্ণ করে নিয়মিত সেবন করলে হাঁপানি ভালো হয়।
৩। শিরীষ ফুল চূর্ণ করে গরম দুধ বা পানি সহ সেবন করলে শুক্রস্তমভন দূর হয়।
৪। শিরীষ গাছের মূল বেটে দংশনস্হানে দিলে বিষক্রিয়া নষ্ট হবে।
৫। চোখ উঠলে শিরীষের বীজ ঘসে চোখে কাজলের মতে করে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
৬। যদি দাঁত নড়তে থাকে তাহলে তা বন্ধ করতে বা মাড়ি শক্ত করতে শিরীষ গাছের বীজ চূর্ণ করে দাঁত মাজলে উপকার পাওয়া যায়।
৭। শিরীষ কাঠের চূর্ণ করে নিয়ে পানির সাথে সেদ্ধ করে ক্বাথ বানিয়ে ব্যবহার করলে চর্মরোগ ভালো হয়।
বাংলাদেশে এই ল্যাভেন্ডার প্রায় দেখতে পাওয়া যায় না বললেই চলে তবে এটা এখন বাংলাদেশে কোথাও কোথাও চাষ করা হচ্ছে। এই গাছ বর্ষ্জীবী গুল্ম। এই গাছ প্রায় এক থেকে দুই মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতাগুলি সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। এর পাতা লম্বা দুই থেকে ছয় সেমি লম্বা, এবং চওড়া চার থেকে ছয় সেমি হয়ে থাকে। এদের ফুলে বেশ গন্ধ থাকে। এই গন্ধের কারণে মশা দূরে থাকে। এই কারণে এটি বাড়ির দেওয়ালে অনেকে লাগিয়ে থাকে। এর ফুল শুকিয়ে চায়ের সাথে খাওয়া যায়। রান্নার মশলার কাজে এবং বিভিন্ন হার্বাল সেডিসিনে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এটা এশিয়ায় কিছু জায়গায় , আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ও ইউরোপে এই গাছ জন্মাতে দেখা যায়। ল্যাভেন্ডার ও এর তেল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উপকারিতাঃ
১। শরীরের যেকোন স্হানে ব্যথা যেমনঃ জয়েন্টে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা। এসব ব্যথা হলে ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
২। যাদের টেনশন এবং মানসিক চাপ একটু বেশি থাকে। তারা ঠিক মত ঘুমাতে পারে না।আর অনিদ্রার কারণে মাথা ব্যথা হয়। তাদের জন্য ল্যাভেন্ডার তেল হতে পারে খুবই উপকারী থেরাপি। এজন্য ঘুমাতে যাবার আগে সামান্য পরিমাণ ল্যাভেন্ডার তেল বালিশে ছিটিয়ে মেখে নিন। এর সৌরভে আপনার ভালো ঘুম আসবে।
৩। ল্যাভেন্ডার তেল চুলে লাগালে চুল খুব ভালো থাকে।
৪। ত্বকের কোষ মরে গেলে বা ত্বক খসখসে হলে ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
৫। পোকা মাকড় কামড়ালে সেই কামড়ের জ্বালা পোড়া কমাতে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল নিয়ে কামড়ানো জায়গাটিতে লাগালে জ্বালা পোড়া কমে যাবে।
৬। খাবারের সাথে ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করলে বদহজম, পেটে ফাঁপা, পেটে ব্যাথা, বমি বমি ভাব ভালো হয়।
৭। ল্যাভেন্ডার তেল ঘাড়, বুকে মালিশ কিংবা নিঃশ্বাসের সাথে ব্যবহার করলে শ্বাস সংক্রমণ রোগ উপকার হয়।
৮। শরীরের কোথাও কেটে গেলে কাঁটা জায়গাটিতে ল্যাভেন্ডার অয়েল লাগালে রক্ত পরা বন্ধ হয় ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কমে যায়।
দুপুরমনি বহুনামেই পরিচিত সে তার মধ্যে বন্ধুক, কটলতা, বন্ধুলী, দুপুরচণ্ডি, দুপুর মালতি, Midday Flower, Scarlet Mallow, Copper Cups, Florimpia, Noon Flower, Scarlet Pentapetes, Scarlet phoenician নামগুলি উল্লেখযোগ্য। বৈজ্ঞানিক নাম- Pentapetes phoenicea. এটি Malvaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। আদিনিবাস দক্ষিণ এশিয়া; পরে এটি সমগ্র দুনিয়াতে বিস্তার লাভ করেছে। একবর্ষজীবি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি বর্ষার মরসুমি ফুল। একহারা লম্বা গাছ। ডালপালা কম। চেহারাটা খসখসে। পাতা বেশ লম্বা, কিনার কাটাকাটা, আগা সরু। ফুল ২ সেন্টিমিটার চওড়া। পাঁচটি চ্যাপ্টা পাপড়ি, সিঁদুরে লাল, কখনো হালকা গোলাপী বা সাদা। কোন গন্ধ নেই। পাপড়ির সঙ্গে চিকন ফিতার মতো লকলকে কয়েকটি উপাঙ্গ ফুলের শোভা বাড়ায়। এর কান্ড একটি অর্ধকাষ্ঠল ০.৫ থেকে ১ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। শাখাগুলি হয় লম্বা এবং ছড়ানো। পাতাগুলি ৬ থেকে ১০ সেমি হয়। ফুলগুলি দুপুরে ফোটে এবং দ্রুত ঝরে যায়। ৫ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট গোলাকৃতি ফল হয়, প্রতিটি প্রকোষ্ঠে ৮-১২ টি করে বীজ থাকে। আগষ্ট থেকে নভেম্বরে এতে ফুল ফোটে। এটি বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য লাগানো হয়; তবে অনেক দেশে এটি আঁশের জন্য বা ভেষজ চিকিৎসার জন্য লাগানো হয়।
উপকারিতাঃ
১। চোখ উঠলে দুপুরমনি গাছের পাতার রস ছেঁকে ফোঁটা ফোঁটা করে চোখে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
২। কানের যন্ত্রনা হলে দুপুরমনি গাছের পাতা ও এক টুকরো আদা থেঁতো করে সরষের ভেজে নিয়ে রস বার করে ছেঁকে নিয়ে সেই তেল কানে দিলে কানের যন্ত্রনা ভালো হয়।
৩। দুপুরমনি গাছের কচি পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি সেবন করলে মাথা ব্যথা ভালো হয়।
৪। দুপুরমনি গাছের ছাল বেটে তার সাথে হলুদ গুড়ো মিশিয়ে গায়ে মাখলে খোস- পাঁচড়া দ্রুত ভালো হয়।
৫। দুপুরমনি গাছের মূল সেদ্ধ করে সেই ক্বাথ সেবন করলে আমবাত ভালো হয়।
৬। দুপুরমনি গাছসহ পাতা বেটে প্রতিদিন একবার করে দাদ ও একজিমার উপর প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।