মিষ্টি কুমড়া এক ধরনের কোমল কাণ্ডবিশিষ্ট বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। কাণ্ড দৃঢ়, হালকা সবুজ, অগভীর খাদবিশিষ্ট এবং তীক্ষ্ম কোমল লোমে আবৃত। গাছের গোড়ার দিকে আইক থেকে কয়েকটি প্রধান শাখা বের হয়। এগুলো ক্রমশ প্রশাখায় বিভক্ত হয়। আমাদের দেশে কচি শাখা-প্রশাখাগুলো পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে। আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরণের শাকসবজির চাষ করা হয়। শাকসবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া হচ্ছে অন্যতম। এর ইংরেজি নাম Sweet pumkin ও বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita moschata. এটি সারাবছরই বাড়ির আঙ্গিনায় ও মাঠে চাষ করা যায়। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক স্থানে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
মিষ্টি কুমড়ার জাত :
বারি মিষ্টি কুমড়া-১, বারি মিষ্টি কুমড়া-২ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ২টি উন্নত জাত। বারি মিষ্টি কুমড়া-১ জাতটি ভাইরাস সহনশীল। হাইব্রিড জাতগুলোর মধ্যে সুপ্রিয়া, সুইটি, ড্রিমগোল্ড, সলিডগোল্ড, ব্যাংকক-১, ব্যাংকক-২, পিকে-১, শান্তি-১, শান্তি- ২ ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।
জলবায়ু ও মাটি:
কুমড়ার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায়।
জমি তৈরি ও বীজ বপন:
পারিবারিক বাগানে কুমড়ার চাষ করতে হলে সুবিধাজনক স্থানে দু’একটি মাদায় বীজ বুনে গাছ মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোন গাছের উপর তুলে দেয়া যেতে পারে। বাণ্যিজিক চাষের ক্ষেত্রে প্রথম ভালোভাবে জমি ৫-১০ সেমি করে কয়েকবার ক্রস চাষ দিয়ে মই দ্বারা সমান করতে হবে। তারপর ১৫-২০ সেমি উঁচু এবং ২.৫ মি বাই ৮মি প্লট তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি প্লটে ২ মিটার পর পর ৪৫ বাই ৪৫ বাই ৪০ সেমি আকারের পিট তাতে বীজ বপন করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতিটি প্লটের মাঝে পানি নিষ্কাশনের জন্য সরু নালী এবং জমির চারপাশে অপেক্ষাকৃত মোটা নালী তৈরি করে রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশন করা যায়।
সার ব্যবহার:
ভালো ফলন পেতে মাটির উর্বরতার উপর ভিত্তি করে জমিতে বিভিন্ন সার ব্যবহার করা দরকার। এক্ষেত্রে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। আমাদের দেশের পেক্ষাপটে প্রতিটি পিটে সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বীজ বপনের প্রায় ১০-১৫ দিন আগে প্রতিটি প্লটে ১০-১৫ কেজি গোবর সার এবং প্রতিটি পিটে ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৪০ গ্রাম এমপি, ৪০ গ্রাম জিপসাম মাটির সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত করে পিট তৈরি করলে ভালো হয়। বীজ অঙ্কুরিত হলে ১৫-২০ দিন পর প্রতিটি পিটে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ প্রদান:
কুমড়া গাছের বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারনের জন্য মাটিতে রস থাকার প্রয়োজন। শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে ৫-৬ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে ফল তোলার তিন সপ্তাহ আগেই সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। অপরদিকে বর্ষা বা বৃষ্টির পানি যাতে বেশি দিন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে।
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বপণের দু’মাসের মধ্যে কুমড়ার গাছ ফল ধরতে শুরু করে এবং রোগাক্রান্ত না হলে আড়াই মাস ব্যাপি ফল দিয়ে থাকে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়। কুমড়ার ফল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কোন পর্যায় নেই। ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী অপক্ক ও পরিপক্ক ফল পাড়া হয়। ফল যত বেশি পাড়া হয় ফলন তত বেশি হয়। সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে হলে ওজন আধা কেজি হলেও ফল পাড়া যায়। ফল পরিপক্ক হলে হালকা হলুদ রং ধারণ করে। ফল পাকাতে চাইলে শেষের দিকে গাছে দিতে হবে। ফল পাকালে হেক্টর প্রতি ফলন কমে যায়। তবে সবজি হিসেবে ফল সংগ্রহ করলে হেক্টর প্রতি ২০ টন ফলন পাওয়া যায়।
অনলাইনে বীজ কোথায় পাওয়া যায়ঃ
দোকানের পাশাপাশি এখন অনলাইনে বীজ কিনতে পারবেন। কিনতে নিচে বীজ লেখা লিঙ্কের উপর ক্লিক করুনঃ