তিসি হচ্ছে আঁশসমৃদ্ধ, প্রোটিন, ক্যলসিয়াম,এন্টি অক্সিডেন্টস, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং মিনারেলের একটি অসাধারণ সমন্বয়। এতে ভিটামিন বি কপ্লেক্স, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। তিসি আমাদের শরীরে এন্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে দেহকে শক্তিশালী রাখে এবং সহজে ক্লান্ত হতে দেয় না।
উপকারিতায় তিসির তেল
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী তিসির তেল। নিয়মিত এই তেল সেবন করলে দেহের অনেক ক্ষতিকর জীবাণু বা মারাত্মক রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যথাঃ
১) ওজন কমানোর জন্য
বর্তমান সময়ে ডায়েট চার্টে তিসির তেল ডাক্তারগণ যুক্ত করতে বলেন। কারন আমাদের দেহের কোলন সিস্টেম উন্নত করে এবং পাকস্থলীর হজম কাজে সহয়তা করে। তাছাড়া শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
২০১৫ সালে নিউট্রিশন জার্নালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ডায়েট প্ল্যানে তিসির তেল যুক্ত করলে সহজেই ওজন কমানো সম্ভব হয়।
২) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
বর্তমানে আমরা সবাই কম-বেশি এই সমস্যা ভুগে থাকি। বেশির ভাগ সময় বাইরের খাবার খেয়ে পেটে গ্যাসের সমস্যা হয় এবং পরে তা কোষ্ঠকাঠিন্য। তিসির তেল আপনার এই প্রতিদিনের সমস্যা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
৩) ডায়রিয়া সমস্যার সমাধান
অনেকেই আছেন ঘন ঘন ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে পড়েন। নিয়মিত তিসির তেল সেবন করলে এই সমস্যা দূর করবে। কারন তিসির তেল আপনার মেটাবলিজম সিস্টেম উন্নত করতে সাহায্য করে।
৪) ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
বর্তমান সময়ে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা নেতিবাচক হারে বেড়ে চলেছে। তিসির তেল আপনাকে প্রাকৃতিক ভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করবে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে। ALA (alpha linolenic acid) যা শরীরে থাকা ক্যান্সারের কোষ তৈরি হতে বাধা দেয়।
২০১৫ সালে দ্যা জার্নাল নিউট্রিশন এন্ড ক্যান্সার সাপোর্ট এর এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, সস্তায় এবং কার্যকরি ভাবে ক্যান্সারের প্রতিরোধ তৈরি করা যায় নিয়মিত তিসির তেল খাওয়ার মাধ্যমে।
৫) হার্ট ভালো রাখে
তিসির তেল হার্ট কে বিশষ ভাবে সুরক্ষা দেয়। কারন এতে থাকা Alpha linolenic acid হার্টকে সুস্থ রাখে এবং হার্টজনিত সকল রোগকে দূরে রাখে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন ১.৫ গ্রাম তিসির তেল সেবন করলে। তার ৫০ শতাংশ হার্টের স্বাস্থ্য ঝুকি কমে যায়।
৬) সোগেনস হ্রাস করে
এই রোগটা সম্পর্কে আমরা হয়তো ভালো করে জানি না।সাধারণত এর লক্ষন হচ্ছে চোখের কোণা গুলো লাল হয়ে যায় এবং মুখের ভিতরটা শুকিয়ে যায়। পানি খেলেও তৃষ্ণা মেটেনা আর একটা সময় মুখের ভেতর দাতের মাড়ি গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে। ফলে ওরাল সমস্যা দেখা যায়। অনেক সময় শরীরের টিস্যু গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্বের প্রায় সাত লক্ষ লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আশার কথা হচ্ছে, নিয়মিত তিসির তেল সেবনে এই রোগ এর অনেকটা সমাধান করবে।
৭) কোলেস্টেরল কমায়
তিসির তেল আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাএা কমাতে সাহায্য করে। খারাপ কোলেস্টেরল LDL কে উল্লেখযোগ্য হারে কমায় তিসির তেলে থাকা ALA (alpha linolenic acid)।
এক গবেষণায় দেখা যায়, হাই- কোলেস্টেরল একজন রোগী। যদি প্রতিদিন এক চা-চামচ তিসির তেল গ্রহন করেন তাহলে ১২ সপ্তাহের মধ্যে কোলেস্টেরল এর মাএা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
৮) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি কমায়
প্রায় প্রতিটি ঘরে একজন করে ডায়াবেটিক রোগী পাওয়া যাবে। বলতে সাধারণ একটি রোগ পরিনত হয়েছে ডায়াবেটিস। নিয়মিত তিসির তেল সেবনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
প্রি-ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা ও কিন্তু কম নয়। সেখানেও আপনাকে সাহায্য করবে তিসির তেল। দৈনিক ১৩ গ্রাম তিসির তেল সেবন করলে মাএ সপ্তাহের মধ্যে এই মারাত্মক ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
তবে অতিরিক্ত মাএায় তিসির তেল সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত তিসির তেল সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে শ্রেয়।