সালাদ বা সবজি দুই ক্ষেত্রেই টমেটোর কদর অনেক। ভিটামিন আর স্বাদের দিক দিয়েও এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও টমেটো শিতকালীন সবজি কিন্তু এখন প্রায়ই আগাম ফসল হিসেবে এর চাষ হর হামেশায় হয়ে থাকে। আর আগাম বাজারে আসলে এর দামও থাকে বেশি। টমেটোর চাষ পদ্ধতি অতীব জটিল না হওয়ায় খুব সহজে নুন্যতম শ্রম ব্যায় করে বাড়ির আংগিনায়, ছাদে বা টবে টমেটো চাষ করে অনেক ফলন আহরন করা যায়। এখানে টবে টমেটো চাষ নিয়ে আলোচনা করা হলো, কিভাবে সহজেই ছাদের অল্প জায়গায় শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে টবেই চাষ করে ফলাতে পারেন অধিক পরিমানে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর
বারমাসি টমেটো
টমেটো চাষে টব/মাটি তৈরি করবেন যেভাবে
ছাদে টমেটো চাষের জন্য বেলে-দোআশ মাটি সবচাইতে উপযোগী। কারণ আলো-বাতাসযুক্ত উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটিতে টমেটো চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। এছাড়াও অন্যান্য মাটিতেও টমেটো চাষ করা যায়।
চাষে কি ধরণের টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই করবেন
টমেটোর চারা লাগানোর জন্য সাধারণত টব বা ড্রাম ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ছোট কন্টেইনার বা প্যাকেট ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যে একটি পাত্রে একটির বেশি টমেটোর চারা দেয়া যাবে না।
টমেটোর জাত বাছাই করা
বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের টমেটো আছে। তবে তাঁর মধ্যে তিনটি ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে
আগাম জাতঃ
বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫, রোমা ভিএফ, রোমারিও, টিপু সুলতান, গ্রেট পেলে, ডেল্টা এফ ১, উন্নয়ন এফ ১, পুষারুবী, নিউ রূপালী এফ ১ ইত্যাদি।
ভরা মৌসুমী জাতঃ
মানিক, রতন, বারি টমেটো ৩, বারি টমেটো ৬, বারি টমেটো ৭, বারি টমেটো ৯, বাহার, মহুয়া ইত্যাদি জাতকে বেছে নেয়া যেতে পারে।
নাবি শীত মৌসুমী জাতঃ
বাহার, রোমা ভিএফ, রাজা, সুরক্ষা ইত্যাদি জাত নাবি চাষের জন্য ভাল।
এবং সারা বছর চাষের উপযোগি জাতঃ বারি টমেটো ৬(চৈতী)চাষ করা যায়।
টমেটো চাষ/রোপনের সঠিক সময়
টমেটো সাধারণত সেপ্টেম্বর মাস থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে বীজ বুনতে হয়। এবং অক্টোবর মাস অথবা নভেম্বর মাসে এই বীজ থেকে চারা রোপন করা যায়। বীজ বোনা থেকে শুরু করে গাছের প্রথম ফল পাকা পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ দিন লাগে এবং ফলধারণ জাতভেদে ৩০-৬০ দিন স্থায়ী হয়।
কিভাবে বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিবেন
টমেটো গাছ রোপনের ক্ষেত্রে টবের মাটি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে চারা গাছগুলোকে এক একটি পাত্রে আলাদা আলাদা ভাবে লাগাতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে গাছে যেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে। টমেটো গাছ মাটি থেকে প্রচুর পুষ্টি উপাদান শুষে নেয়। তাই গাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি দেবেন না। এতে গাছের গোড়া পচে যাবে।
সঠিক নিয়মে টমেটোর চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল
যখন টমেটোর বীজ এক ইঞ্চি লম্বা হব তখন এই গাছ টবে লাগাতে হবে। কোন টবে যেন দুইটা গাছ একত্র না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাছে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এবং সঠিক নিয়মে পানি দিতে হবে।
টমেটো গাছে সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ
টমেটো গাছে সাধারণত জৈব সার বেশী ব্যবহার করা হয়। যেমন গোবর সার, কম্পোস্ট, রান্নাঘরের সবজির খোসা, ডিমের খোসা জাতীয় জিনিস গুলো ব্যবহার করুন সার হিসেবে। এছাড়া অজৈব সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি সার দিতে পারেন।
টমেটো গাছে পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করবেন
টমেটো গাছে পোকার উপদ্রব হলে সাবান পানি স্প্রে করুন অথবা ছাই ছিটিয়ে দিন। এতে পোকা চলে যাবে। ফলন এলে গাছের মাটি কিছুটা শুকনো রাখুন। একদম কাদা কাদা মাটিতে ফুল ঝরে যেতে পারে।
কিভাবে টমেটোর বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা করবেন
টমেটো গাছ একটু বড় হলে গাছটিকে একটি শক্ত কাঠির সাথে বেধে দিতে হবে । নিচের পূরানো পাতা এবং কিছু ডাল ফেলে দিতে হবে । যাতে গাছটি বেশী ঝোপড়া না হয়ে যায় । টবের মাটি কয়েকদিন পর পর হালকা নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে ।
টমেটোর খাদ্য গুণাগুণ
টমেটোতে অনেক ধরণের খাদ্যগুন বিদ্যমান। এটি ভিটামিন এ এবং সি-এর অন্যতম উৎস। টমেটো একটি অতি প্রয়োজনীয়, জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি।
কখন টমেটো সংগ্রহ করবেন
টমেটোর ফল পাকার পর লাল রঙ ধারন করে সেই সময়ে ফল সংরক্ষন করতে হয়। এছাড়া ফলের নিচে ফুল ঝরে যাওয়ার পর যে দাগ থাকে ঐ স্থান থেকে লালচে ভাব শুরু হলেই ফল সংগ্রহ করা যাবে। এতে ফল অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
টমেটোর অন্যান্য ব্যবহার
টমেটো কে আমাদের দেশে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়। তবে তাঁর মধ্যে কাঁচা ও রান্না করে-এ দুইভাবেই টমেটোকে খাওয়া যায়। টমেটো বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয় যেমন জ্যাম, জেলি, সস্, কেচাপ, আচার, সালাদ ইত্যাদি।