কাঁঠাল এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus (ইংরেজী নাম: Jackfruit) মোরাসিয়া পরিবারের আর্টোকার্পাস গোত্রের ফল। এক প্রকারের হলুদ রঙের সুমিষ্ট গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসাবে সরকারীভাবে নির্ধারিত। বাংলাদেশের সর্বত্র কাঁঠাল গাছ পরিদৃষ্ট হয়। কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড়। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরীর জন্য সমাদৃত। কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণীর পছন্দের খাদ্য। তুলনামূলকভাবে বিশালাকার এই ফলের বহির্ভাগ পুরু এবং কান্টকাকীর্ণ, অন্যদিকে অন্তরভাগে একটি কাণ্ড ঘিরে থাকে অসংখ্য রসালো কোয়া। কাঁঠালের বৃহদাকার বীজ কোয়ার অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত।
কাঁঠালের বেশ কিছু জাত রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে চাষকৃত জাতসমূহ মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। গালা ও খাজা – এ দুটি জাত ছাড়াও কাঁঠালের আরো জাত আছে। গালা ও খাজা কাঁঠালের মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিসেবে রয়েছে ‘রসখাজা’। এছাড়া আছে রুদ্রাক্ষি, সিঙ্গাপুর, সিলোন, বারোমাসী, গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ, হাজারী প্রভৃতি। তন্মধ্যে শুধুমাত্র হাজারী কাঁঠাল বাংলাদেশে আছে, বাকীগুলো আছে ভারতে।
উচ্চ ফলনশীল কাঁঠাল বারি কাঁঠাল-১ (২০০৮) এবং বারি কাঁঠাল-২ (২০১০)।। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এই ২টি উফশী জাত জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত। বারি কাঁঠাল-১ সারা দেশে চাষের উপযোগী। মধ্যম সাইজ (৯ কেজি) গাছপ্রতি ১২৫টি ফলসহ ওজন ১১৮১ কেজি পর্যন্ত। হেক্টরপ্রতি ফলন ১১৮ টন, ৫৫%, খাওয়ার যোগ্য এবং মিষ্টতা টিএসএস ২২%। বারি কাঁঠাল-২ অ-মৌসুমি ফল। উফশী জাত, মধ্যম সাইজ (৭ কেজি), গাছপ্রতি ৫৪-৭৯টি ফলসহ ওজন ৩৮০-৫৭৯ কেজি। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৮-৫৮ টন, খাদ্য উপযোগী ৬০% এবং মিষ্টতা টিএসএস ২১%।
কাঁঠাল গাছ মাঝারি আকারের এবং প্রায় ৮-১০ মিটার লম্বা হয়। প্রধানমূলী ও পার্শ্ববিস্তৃত্ব শিকড় সাধারণত মাটির ২ মিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সাদা দুধের মত তরুক্ষীর এ গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পাতা গাঢ় সবুজ, উপবৃত্তাকার, সরল ও একান্তভাবে সাজানো। রোপণের ৭-৮ বছর পরেই ফল ধরা শুরু হয়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ফুল আসে। সহবাসী উদ্ভিদ বিধায় একই গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথকভাবে ধরে। গদাকৃতি মঞ্জরী দন্ডে প্রচুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুল একত্রে থাকে। স্পাইক ধরনের এ পুষ্পমঞ্জরী ডিঙি নৌকার মত দুটি চুমুরী বা খোলস দ্বারা আবৃত। কাণ্ডের গোড়ার দিকে সাধারণত স্ত্রী ফুল এবং গোড়া ও শীর্ষে পুরুষ ফুল ধরে। ছোট অবস্থায় পুষ্পমঞ্জরী দেখেই লিঙ্গ নিরূপণ করা যায়। পুরুষ মঞ্জরীর চেয়ে স্ত্রী মঞ্জরী লম্বা-চওড়ায় বেশি হয়, পুরুষ ফুলের মঞ্জরীর উপরিভাগ বেশ নরম ও মসৃণ মনে হয় অপরদিকে স্ত্রী মঞ্জরীর উপরিভাগ দানা-দানা বা অমসৃণ মনে হয়। পুরুষ মঞ্জরীদন্ড সরু ও দীঘল। কিন্তু স্ত্রী মঞ্জরীদন্ড অপেক্ষাকৃত মোটা ও খাটো। স্ত্রী মঞ্জরীর বোঁটার কাছে মোটা রিঙের মত থাকে, পুরুষর থাকে সেটা সরু। প্রকৃতপক্ষে একটি পুরুষ ফুল হল একটি সবুজ চর্মবৎ নলাকার পুষ্পপুট দ্বারা আবদ্ধ একটি মাত্র পুংকেশর। পরাগরেণূ ছাড়ানোর সময় পুংকেশরগুলো পুষ্পপুট থেকে বেরিয়ে মঞ্জরীর উপরিভাগে চলে আসে এবং কয়েকদিনের মধ্যেই মঞ্জরীর উপরিভাগ হলুদ পরাগরেণুতে ছেয়ে যায়। পরাগরেণূ বিদারণ বা ফুল ফোটার ৩-৪ দিনের মধ্যেই পরপরাগায়ন ও গর্ভধান সম্পন্ন হয়। ফল যৌগিক শ্রেণীর সরোসিস ধরনের। একটি কাঁঠালের মধ্যে অসংখ্য কোষ বা কোয়া থাকে। এগুলোই প্রকৃতপক্ষে ফল। কোষের চার পাশে পাতলা ফিতার মত চিটা বা চাকি থাকে। এই চিটা ও খোসাকে একত্রে ভুতরো বা ছিবড়া বলে। খোসার উপরে ছোট বড় কাঁটা থাকে এবং কাঁটার সংখ্যা যত ফুলের সংখ্যাও তত হয়। ফলের অমরাবিন্যাস প্রান্তীয় ধরনের। ডালের গা বেয়ে ফল ধরে। ফল পাকে মে-আগস্ট মৌসুমে।
পুষ্টিগুণ: কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। এতে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী।
উপকারিতা:
১। কাঁঠাল খেলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম থাকে।
২। কাঁঠালে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছ। তাই কাঁঠাল খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্যে কাঁঠালে উচ্চরক্তচাপের উপশম হয়।
৩। কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। তাই কাঁঠাল রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
৪। কাঁঠাল নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন সি।
৫। কাঁঠাল খেলে আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
৬। কাঁঠাল আমাদেরকে সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৭। কাঁঠালের রস খেলে বদহজমে উপকার হয়।
৮। কাঁঠালে রয়েছে খনিজ উপাদান আয়রন যা দেহের রক্তাল্পতা দূর করে।
৯। কাঁঠাল আঁশালো হওয়ায় কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
১০। শিশুকে কাঁঠালের রস খাওয়ালে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হয়। অন্যদিকে তার প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়
অনলাইনে গাছপালা কোথায় পাওয়া যায়ঃ
নার্সারির পাসাপাসি গাছপালা কিনতে পারবেন এখন অনলাইনে ।গাছপালা কিনতে ভিজিট করুন নিচে দেয়া নার্সারী লেখার উপর এবং অর্ডার করতে পারেন দেশের যেকোন প্রান্ত থেকেঃ