আমলকী বা আমলকি (বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus emblica) ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস গণের একপ্রকার ভেষজ ফল।[১] সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ‘আমালিকা’। ইংরেজি নাম ‘aamla’ বা ‘Indian gooseberry’। এরা রোমশ বিহীন বা রোমশ পর্ণমোচী বৃক্ষ।
বর্ণনা
আমলকী গাছ ৮ থেকে ১৮ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হতে পারে, পাতা ঝরা প্রকৃতির। হালকা সবুজ পাতা, যৌগিক পত্রের পত্রক ছোট, ১/২ ইঞ্চি লম্বা হয়। হালকা সবুজ স্ত্রী ও পুরুষফুল একই গাছে ধরে। ফল হালকা সবুজ বা হলুদ ও গোলাকৃতি ব্যাস ১/২ ইঞ্চির কম বেশি হয়। কাঠ অণুজ্জল লাল বা বাদামি লাল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে ই দেখা যায়। গাছ ৪/৫ বছর বয়সে ফল দেয়। আগষ্ট – নভেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বীজ দিয়ে আমলকির বংশবিস্তার হয়। বর্ষাকালে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
বিস্তার
আমলকী গাছ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, চীন, কম্বোডিয়া, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যায়।
চিকিৎসা-গবেষণা
আমলকি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে, এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিস রোগে আমলকির রস কিছু কাজ করে। কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগেও আমলকি কার্যকর বলে ইঁদুরের উপর চালিত গবেষণায় প্রমান মিলেছে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের পরে ক্ষতিগ্রস্ত প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) -এর ক্ষত সারাতে আমলকি কার্যকর। আমলকির ফল, পাতা ও ছাল থেকে তৈরি পরীক্ষামূলক ওষুধে কিছু রোগ নিরাময়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে যেমন- ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, প্রদাহ এবং কিডনি-রোগ। আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল-মাত্রা হ্রাস করতে পারে বলে প্রমাণ রয়েছে ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকির রস রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে পারে এবং লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরোদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন-সি বা এস্করবিক এসিড থাকে (৪৪৫ মিগ্রা/১০০ গ্রাম) । তা সত্ত্বেও আরো অন্যান্য উপাদান নিয়ে মতভেদ আছে এবং আমলকির ‘এন্টি-অক্সিডেন্ট’রূপে কার্যকারিতার পেছনে মূল ভূমিকা ভিটামিন-সি এর নয়, বরং ‘এলাজিটানিন’ নামক পদার্থসমূহের বলে মনে করা হয়। যেমন এমব্লিকানিন-এ (৩৭%), এমব্লিকানিন-বি (৩৩%), পানিগ্লুকোনিন (১২%) এবং পেডাংকুলাগিন (১৪%) এতে আরো আছে পানিক্যাফোলিন, ফিলানেমব্লিনিন-এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ। এই ফলে অন্যান্য ‘পলিফেনল’ও থাকে। যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড, কেমফেরল, এলাজিক এসিড ও গ্যালিক এসিড।
আমলকীর ৭টি গুনাবলিঃ
১. ক্যানসার প্রতিরোধে
আমলকীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণায় বলা হয়, আমলকি ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এটি ক্যানসার প্রতিরোধ করে এবং ক্যানসারের চিকিৎসায়ও সাহায্য করে।
২. পেপটিক আলসার
প্রতিদিন সকালে আমলকীর জুস খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে।
৩. ওজন কমানো
আমলকী শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়।
৪. মলত্যাগের অভ্যাস ঠিক হয়
আমলকীর মধ্যে থাকা আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য কমিয়ে মলত্যাগের অভ্যাস ভালো হতে সাহায্য করে।
৫. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকী খুব দ্রুত কাজ করে। আমলকীর গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৬. দৃষ্টিশক্তি ভালো করে
আমলকীর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণ রেটিনাকে সুরক্ষা দেয়। এটি ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস; যা দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চোখের চুলকানি বা চোখের লাল ভাব কমায়।
৭. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
আমলকী রক্তের শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ আমলকীর রস প্রাকৃতিক ইনসুলিনের কাজ করে। আমলকীর শরীরের রক্ত চলাচল বাড়ায়।
অনলাইনে বীজ কোথায় পাওয়া যায়ঃ
দোকানের পাশাপাশি এখন অনলাইনে বীজ কিনতে পারবেন। কিনতে নিচে বীজ লেখা লিঙ্কের উপর ক্লিক করুনঃ